ঝর্ণা রানী ভৌমিক
ডেইলি কক্সবাজার ডেস্ক :
ঈদ ছুটি পেয়ে মাকে দেখতে বাড়ি আসেন বড় ছেলে। মা বলতে ছেলে বাসুদেব ভৌমিক পাগল। বড় ছেলে বাড়ি আসায় আনন্দের সীমা নেই ঝর্ণা রানীরও। প্রায় ছয় মাস প্রতীক্ষার পর ঢাকার তেজগাঁও মহিলা কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক বাসুদেব গত শনিবার বাড়িতে আসেন। ছেলেকে কী খাওয়াবেন তা নিয়ে মহা ব্যস্ত মা ঝর্ণা রানী। বৃহস্পতিবার শোলাকিয়া ঈদগাহ সংলগ্ন সবুজবাগে বাসায় ছেলেকে ঘিরে নাস্তার আয়োজন চলছিল। মা ভোরে ঘুম থেকে উঠে সেমাই রান্না করেন। তারপর ছেলেকে ঘুম থেকে জাগিয়ে গোসল করার করতে পাঠান। সেমাই রান্নার পর ঝর্ণা রানী তখন রুটি বানানোর জন্য ময়দা মাখাচ্ছিলেন। এমন সময় চারদিকে গোলাগুলি। তখনই একটা প্রয়োজনে রান্নাঘর থেকে শোয়ার ঘরে যান ঝর্ণা। এ সময়ই জানালা দিয়ে একটা গুলি এসে ঠিক তার মাথায় লাগে। ঘরের ভেতরেই পড়ে যান তিনি। মেঝে ভেসে যায় রক্তে। পরিবারের সদস্যদের তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। মুহূর্তেই চুরমার হয়ে যায় একটি পরিবারে সব সুখ-স্বপ্ন। খবর সমকাাল’র।
ঝর্ণা রানী ভৌমিকের এমন মৃত্যুতে হতবাক পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজন। প্রতিবেশীরা জানান, ঝর্ণা ছিলেন এলাকায় একজন প্রাণবন্ত নারী। প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর নেওয়া, অন্যের বিপদ-আপদ, অসুখ-বিসুখে তিনি সবার পাশে থাকতেন। স্বামী গৌরাঙ্গনাথ ভৌমিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে সামন্য আয় করেন। তারপরও স্বল্প আয়ের মধ্যেও তিনি প্রতিবেশীর সুখ-দুখের খবর নিতেন। মাকে হারিয়ে চিৎকার করে কাঁদছেন বাসুদেব ভৌমিক। তাকে সান্ত্বানা দেওয়ার ভাষা নেই কারো। বিলাপ করতে করেত ছেলে বলেন, ‘মা প্রতিদিন তিন চারবার মোবাইল করে খবর নিতেন। আমি কি করছি, কি খাচ্ছি। মার কাছে আমি যেন শৈশবের বালক। মা আমার জন্য আমার পছন্দের নাস্তা তৈরি করতে গিয়েই মারা গেলো।’ তার কান্নায় শামিল পাড়া-প্রতিবেশীরাও। ঝর্ণা রানীর ছোট ছেলে সুবদেব ভৌমিক আজিমউদ্দিন হাইস্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। সে কিছু বলতে পারছে না, মাকে হারিয়ে যেন বাকরুদ্ধ। স্বামী গৌরাঙ্গ নাথ ভৌমিক বলেন, ‘ঝর্ণা আমার বাঁচার অনুপ্রেরণা ছিল। ভগবান আমাকে আগে নিলে ভাল হতো। এই দুই ছেলেকে দেখার কেউ নেই। কি নিয়ে বাঁচবো আমি।’
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের কাছে টহলরত পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্য, এক হামলাকারী ও ঝর্ণা রানী নিহত হন। আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন।