সঠিক সময়ে জামায়াতের বিচার শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘অপেক্ষা করতে হবে। আমরা বলেছি বিচার হবে। এখন এটা শুরু হওয়া কেবল সময়ের অপেক্ষা।’
এ মাসে না, সামনের মাসে, বা সে মাসেও না সামনের মার্চে জামায়াতের বিচার শুরু করা যাবে, আইন সংশোধনের জন্য মন্ত্রিসভায় উঠবে বলে দুইবছর পার করে দিলেও এ মার্চেও শুরু হচ্ছে না জামায়াতের বিচার। আগামী সোমবার এ মাসের শেষ মন্ত্রীসভার বৈঠকেও এই সংশোধনী অনুমোদনের জন্য উঠানো হবে কিনা নিশ্চিত করে বলছেন না কেউ।
যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দাবিতে আন্দোলনকারীরা বলছেন,সঠিক সময় খোঁজার চেষ্টায় দেখা যাবে জামায়াত রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির সুযোগ নেবে। ট্রাইব্যুনালে ক্রিমিন্যাল অর্গানাইজেশন হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পরও আইন সংশোধনের নামে দুইবছর সময় লাগাকে যৌক্তিক মনে করছেন না তারা।
সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত সংগঠন নিষিদ্ধের বিধান রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন সংশোধনে আইনের খসড়াটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য ফেব্রুয়ারিতেই তোলা হবে জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। কিন্তু তারপরও বারবার খসড়া আইনটি মন্ত্রিপরিষদে উঠানোর কথা বলা হলেও কার্যত তা হয়নি। এটাকে তামাশা হিসেবেই উল্লেখ করছেন অ্যাক্টিভিস্টরা।
২০১৪ সালে আইন মন্ত্রণালয় থেকে ট্রাইব্যুনালের আইনে চতুর্থ সংশোধনী আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সময় বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সংগঠনকে নিষিদ্ধ এবং ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিধান যুক্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ আরেক দফা সংশোধন করা হবে। বিদ্যমান আইনে মুক্তিযুদ্ধকালে অপরাধী সংগঠনের বিচারের সুযোগ থাকলেও তার শাস্তির কোনও বিধান নেই। এ কারণে ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। তাই আইনে সংশোধনী আনা প্রয়োজন। আইন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন সূত্রে জানা গেছে, সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশ ও সবুজ সংকেত না পাওয়ায় আইনটি সংশোধন করতে ধীর গতিতে চলছে মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘কবে থেকে সংশোধন প্রক্রিয়া হবে আশ্বাস দিয়েই রাখা হয়েছে। আর এই সুযোগে আবারও হেফাজত নানারকম হুমকি দেওয়ার সাহস করছে। ভুলে গেলে চলবে না হেফাজত আর জামায়াত ভিন্ন কিছু না। তিনি বলেন, এতো ছোট্ট একটা সংশোধনীতে এতোদিন সময় লাগার যৌক্তিক কোনও কারণ আমার বোধগম্য হয় না। জামায়াতকে আদালত ক্রিমিন্যাল অর্গানাইজেশন বলার পরও তাদের বিচারে দেরী করাটা সরকারের জন্য আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত-সম বলেই আমি মনে করি।
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, আমরা আসলেই বিচারটা হোক চাই বলেই দুইবছর ধরে আইন সংশোধনের অপেক্ষা করছি। কিন্তু এধরণের গরিমসি দেখালে ফল ভাল হবে না। আমরা আগেও দেখেছি, সরকার চাইলে আইন সংশোধনীতে একমাস লাগে না। তাহলে এইদফা দুইবছর পার করে দিতে হচ্ছে কেন, সে জবাব সরকারকে দিতে হবে।