বৃহস্পতিবার ঘোষিত হতে পারে ইউপি নির্বাচনের প্রথম দফার তফসিল। তাই সারা দেশব্যাপী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ব্যাপাক তোড়জোড় চলছে। তারি ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারে বেশ জোরেশোরেই শুরু হয়েছে ইউপি নির্বাচনের তোড়জোড়। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য সব ধরনের কলাকৌশল ঠিক করে রেখেছে। বেশিরভাগ প্রার্থীরা দলীয় নেতাকর্মী এবং সাধারণ ভোটারদের সাথে সমন্বয় রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচনের। যেহেতু এবারই প্রথম দলীয়ভাবে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তাই সব দলেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে দলীয় নেতাকর্মীদের সমর্থন। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি সব দলেই প্রার্থী বাছাই নিয়ে কাজ প্রায় শেষ বলে জানান নেতারা।
জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে ১১ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার দেশের ইউপি নির্বাচনের প্রথম দফার তপসিল হতে পারে। এতে প্রথমে সারা দেশের ৭৬০ টির মত ইউপির নির্বাচনি তপসিল ঘোষণা হতে পারে, আর এর মধ্যে কক্সবাজারের মহেশখালী শাপলাপুর ইউপি ছাড়া বাকী সব ইউনিয়ন, এছাড়া কুতুবদিয়া এবং টেকনাফ উপজেলার সব ইউপি নির্বাচনী তপসিল ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, আমরাও এধরনের সংবাদ জেনেছি কিন্তু পরে কিছু সংশোধন হয়েছে, যতটুকু জেনেছি প্রথম দফায় আরো কম ইউপির তপসিল হতে পারে তাই কক্সবাজারের ঠিক কতটি ইউপির তফসিল ঘোষণা হবে সেটা এখন বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি রেখেছি।
আমাদের টেকনাফ অফিস থেকে জানা গেছে অতি সহসা ইউপি নির্বাচনের তপসিল ঘোষণা হতে পারে। সে রকম খবরে উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন এবং ১ টি পৌরসভাতে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বেশির ভাগ সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিতে শেষ তদবির করছে। এবং মাঠে ঘাঠে অনেকটা নির্বাচনী আবহাওয়া বিরাজ করছে। টেকনাফ সদর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা যুবলীগ সভাপতি নুরুল আলম ছাড়াও মনোনয়ন দৌড়ে আছেন শ্রমিক লীগ নেতা শাহজাহান, আর বিএনপি থেকে এই ইউনিয়নে বিএনপি নেতা জিয়াউর রহমানের নাম শুনা যাচ্ছে নেতাকর্মীদের মুখে। আর সাবরাং ইউনিয়নে উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেন, ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দৌড়ে আছেন সোনা আলী এবং হাবিবুর রহমান আর বিএনপি থেকে ইসমাঈল মেম্বার, মোঃ হাসেম, সুলতান আহাম্মদ এর নাম বলছে স্থানিয় নেতাকর্মীরা। এছাড়া বর্তমান চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করবে বলে শুনা যাচ্ছে। তবে বেশির ভাগ প্রার্থী নির্বাচন করা না করা নির্ভর করবে দলীয় মনোনয়নের উপর। কুতুবদিয়া বড়ঘোপ ইউনিয়নের বেশ কয়েক জন ভোটারের সাথে আলাপকালে জানা গেছে বড়ঘোপ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ থেকে স্থানীয় ইউপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা সাবের আহাম্মদ কোম্পানী এবং এই ইউনিয়ন থেকে বিএনপি থেকে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন চেয়ারম্যান হিসাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কৈয়ারবিল ইউনিয়নের মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি আজমগীর মাতবর ছাড়াও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার আহাম্মদ উল্লাহ, মনোয়ারুল ইসলাম মুকুল দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে আছেন। আর এই ইউনিয়নে বিএনপি থেকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি জালাল আহাম্মদ আর মো. আবু মুসা কুতুবীর নাম শোনা যাচ্ছে। এদিকে মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়ন ছাড়া বাকী ইউনিয়নে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে বলে জানান স্থানিয়রা।
কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি গত বারে খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারি নি। সেই থেকে আজ পর্যন্ত সবসময় সাধারণ মানুষের সাথে আছি একই সাথে পুরো ইউনিয়নে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করছি। আমি নেতা নয়, কর্মী হয়ে মানুষের সাথে আছি আমি দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহী। আশা করি দল আমাকে সুযোগ দিলে আমি দলকে পিএমখালী ইউপি চেয়ারম্যান উপহার দিতে পারবো। একই ইউনিয়নে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা ছৈয়দ নূর। তিনি বলেন আমি শতভাগ আশাবাদী দলীয় মনোনয়ন পাব, মানুষ বিএনপিকে ভোট দিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তবে সবাই ভয় পাচ্ছে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা ? সেটা নিয়ে।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী বলেন, আমরা ইউপি নির্বাচন অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। দলীয় প্রার্থীদের মতামত তারা সুষ্ঠু নির্বাচন হলে নিশ্চিত বিজয় হবে। তবে সংশয় হচ্ছে আদৌ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা। কারণ গত পৌর নির্বাচনে দেশের মানুষ দেখেছে কিভাবে নির্বাচন হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রার্থীদের তালিকা আমরা তৈরি করতে উপজেলা নেতাদের বলা হয়েছে। বাকি সব কাজ কেন্দ্র যেভাবে নির্দেশনা দেয় সেভাবে হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা বলেন, এখনো কেন্দ্রিয় নির্দেশনা পাইনি। তবে অনেক আগে থেকে প্রার্থীরা কাজ করছে। আমরা তাদের মধ্য থেকে জনপ্রিয় প্রার্থী বাছাই করে মনোনয়ন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। ইউপি নির্বাচন হবে শান্তিপূর্ণ, আমরা চেয়ারম্যান মনোনয়নের বাকী প্রক্রিয়া কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুত শুরু করবো।