দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পর কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আগামী ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শনিবার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহি কমিটির সভা শেষে জেলা আওয়ামীলীগের এ সম্মেলনের তারিখ ঘোষনা করেছেন দলের সাধারণ স¤পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সম্মেলনে কে প্রধান অতিথি হচ্ছেন এটি নিশ্চিত হওয়া না গেলেও সম্মেলনের নতুন তারিখ ঘোষণার খবর পেয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মাঝে আবারো চাঙাভাব ফিরে এসেছে। জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ সম্মেলনের এ নতুন তারিখ ঘোষণার তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত বছরের ২৮ নভেম্বর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ থাকলেও অদৃশ্য কারণে তা পিছিয়ে যায়।
তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও কাউন্সিলরদের আশা, এবার তাঁরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নতুন নেতৃত্ব তৈরি করবেন, যে নেতৃত্ব আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলকে জেলার চারটি সংসদীয় আসন উপহার দেয়ার পাশাপাশি সামনের স্থানীয় নির্বাচন গুলোতেও ভাল ফলাফল বয়ে আনতে পারবে।
দলের নেতা-কর্মীরা জানান, ২০০৩ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সরাসরি ভোটে এ কে এম মোজাম্মেল হক সভাপতি ও সালাহ উদ্দিন আহমদ সাধারণ স¤পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৫ সালের ২৭মে এ কে এম মোজাম্মেল হকের মৃত্যু হলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী। তিনি দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করলে তখন থেকে দ্বিতীয় সহ-সভাপতি এ কে আহমদ হোসেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তবে ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় নয় বছর আগে। এ পর্যন্ত জেলা কমিটি সম্মেলনের জন্য কয়েক দফা তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। সর্বশেষ তারিখ ছিল ২০১৫ সালের ২৮ নভেম্বর। জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ গেল ডিসেম্বরের ৫ তারিখও সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ঘোষিত কোন তারিখেই সম্মেলন হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের কয়েকজন নেতা জানান, জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে নয় বছর আগে। সম্মেলন না হওয়ায় দলে কোন্দল বেড়েছে। নেতা-কর্মীরা এখন কয়েক ভাগে বিভক্ত। এত দিন এক পক্ষ চেয়েছিল সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব দলের হাল ধরুক। কিন্তু অপর দুই পক্ষের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। ওই দুই পক্ষ চেয়েছিল সম্মেলন না করে কেন্দ্রের মাধ্যমে কমিটি ঘোষিত হোক। ফলে টানাপোড়েনে ছিলেন দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা।
কক্সবাজার জেলা আ’লীরে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ কে আহমদ হোসেন সব সময় বলে আসছেন, কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন স¤পন্ন করার প্রস্তুতি নেয়া হবে। একটি ছাড়া সব উপজেলায় দলের কমিটি সম্পন্ন করা আছে।
বার বার তারিখ ঘোষিত হওয়ার পর জেলা সভাপতি পদের জন্য যারা ইতিমধ্যে প্রার্থীতা ঘোষনা দিয়ে মাঠে ছিলেন, তাঁরা হলেন-বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ কে আহমদ হোসেন, বর্তমান সাধারণ স¤পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ, সাবেক সাধারণ স¤পাদক নজরুল ইসলাম চৌধুরী, যুগ্ম স¤পাদক সিরাজুল মোস্তফা ও মহিলা আওয়ামীলীরে সভানেত্রী কানিজ ফাতেমা আহমদ। আর সাধারণ স¤পাদক পদে জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য রাশেদুল ইসলাম, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম, রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আবছার, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক স¤পাদক মাশেদুল হক রাশেদ।
জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মাবু জানান, তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা চান সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা কমিটির নতুন নেতৃত্ব তৈরি হোক। কিন্তু জেলা কমিটির অনেক নেতা এত দিন সম্মেলন করতে রাজি ছিলেন না। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে আবারো সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হওয়ায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা খুশি। ২৯৮ জন কাউন্সিলর ভোট দিয়ে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনের সুযোগ পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সাধারণ স¤পাদক পদপ্রার্থী রাশেদুল ইসলাম বলেন, তরুণ নেতৃত্বই সবসময় দল ও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে এসেছে। আর তরুণদের মাঝেই গণতন্ত্রের চর্চা বেশি পরিলক্ষিত হয়। এ কারণে আমরা তরুণরা সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব গড়ে উঠুক এমনটি দাবি করছি শুরু থেকে। কিন্তু ঘাপটি মেরে থাকা কিছু সুবিধাভোগী নিজেদের সুবিধার জন্য সম্মেলনের বিরোধিতা করে নানা চলচাতুরিতে পকেট কমিটি গঠন কিংবা কমিটি রদ করার চেষ্টা করে এসেছে। অবশেষে জেলা সম্মেলনের নতুন করে তারিখ ঘোষনা হওয়ায় তরুণ নেতৃত্বের মাঝে আবারো আশা জেগেছে। ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেলে দলে শৃঙ্খলা ফিরাতে তৃণমূলের নেতারা যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করতে ভুল করবেন না বলে মনে করেন তিনি।
সম্মেলন প্রত্যাশী অন্যপ্রার্থীদের মাঝেও তৃণমূল নেতাকর্মীদের রায়ের প্রতি সম্মান পরিলক্ষিত হয়েছে। তাদের মতে দলীয় কোন্দল আর নেতা-কর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা দূর করতে সম্মেলনের বিকল্প নেই।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহি কমিটির শনিবারের সভার পর আগামী ২৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন করার জন্য তারিখ ঘোষণা দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। উখিয়া, সদর কক্সবাজার, চকরিয়া, পেকুয়া, টেকনাফ, রামু ও কুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ করা আছে। মহেশখালী উপজেলারটাও দ্রুত শেষ করে নিয়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক এগিয়ে যাওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন আগামীর এ সভাপতি প্রার্থী।