শিক্ষকদের টানা কর্মবিরতিতে অচল হয়ে পড়েছে দেশের সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। আর চলমান এই স্থবিরতা বা অচলাবস্থা নিরসনের কোনো উদ্যোগ আদৌ দেখা যাচ্ছে না। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আলোচনার মাধ্যমের সমস্যা সমাধানের প্রত্যাশা করা হলেও সরকারের উদাসীন মনোভাবের ফলে বর্তমানে নো-রিটার্ন পয়েন্টে অবস্থান করছেন তারা। যার ফলে দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা ক্রমেই ঝুঁকির মুখে পড়ছে। গত ১১ জানুয়ারি থেকে ৫ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন দেশের ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আজ রোববার সপ্তম দিনের মতো তাদের কর্মসূচি চলছে।
তবে কবে নাগাদ ক্লাসরুমে ফিরবে শিক্ষকরা তা যেন কেউই বলতে পারছে না। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলমান অস্থিরতা নিরসনে সরকারের উদ্যোগহীনতাই দায়ী। তবে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ বলছেন ভিন্নকথা। তিনি বলেন, চলমান সমস্যা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের কাছে প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। প্রস্তাব পাওয়ার পর তা সরকার যাতে গ্রহণ করে, তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাব।
এদিকে, একটি আন্তর্জাতিক শিক্ষা সম্মেলনে যোগ দিতে গত শুক্রবার রাতে যুক্তরাজ্য গেছেন শিক্ষামন্ত্রী। যাওয়ার আগে তিনি বলেছেন, আমি দেশে না থাকলেও অফিসে লাইভ আছি, থাকব। শিক্ষকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে সচিব সাহেবকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমিও যোগাযোগ রাখছি।
অন্যদিকে শিক্ষকরা বলছেন, কোনোভাবেই ছাড় দিয়ে সমঝোতায় আগ্রহী নন তারা। শিক্ষকরা চাচ্ছেন দ্রুত সমস্যার সমাধান হোক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে আসুক। ছাত্রছাত্রীরা যাতে কোনোভাবেই সেশনজটে না পড়ে সেদিকটি মাথায় রেখেই তারা এগোনোর চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্ষতির বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা সমস্যা সমাধানের রাস্তা খুঁজছি। যে কারণে কেউ ডাকলেই আমরা আলোচনায় বসি। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে। কোনোভাবেই আমরা পিছপা হব না। এবিষয়ে আমরা অনড়।
নতুন পে-স্কেল সংক্রান্ত সমস্যা চিহ্নিত করে সুপারিশের জন্য সরকার সচিব কমিটি গঠন করে দেয়। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ কমিটির বসার কথা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সাথে এ কমিটির এখন পর্যন্ত কোনো বৈঠক হয়নি। শিক্ষকরা গত মে মাস থেকেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করে আসছেন। এজন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ চেয়ে ৫ বার চিঠি দিয়েছেন। এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের মাধ্যমেও যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই তারা সাক্ষাৎ পাচ্ছেন না। এ পরিস্থিতিতে দেশের সিনিয়র নাগরিক ও শিক্ষাবিদরা দ্রুত প্রধানমন্ত্রী বা তার প্রতিনিধির সাথে শিক্ষকদের বৈঠকের প্রত্যাশা করছেন। এ ধরনের বৈঠক ছাড়া সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা ক্ষীণ। বৈঠকের মাধ্যমেই একটি সন্তোষজনক সমাধান সম্ভব বলে তারা মনে করেন।
সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ইঙ্গিত ছাড়া সঙ্কটের সমাধান না হওয়ার আশংকাই বেশি। কেননা শিক্ষকরা প্রথম থেকেই তাদের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে আসছেন। এক্ষেত্রে সচিব কমিটিও কিছুই করতে পারবে না। এছাড়া শিক্ষকরা মনে করেন পরিস্থিতি বর্তমান অবস্থায় নিয়ে আসার জন্য যারা দায়ী তাদের মধ্যে একাধিক আমলাও আছেন।
শিক্ষকদের অভিযোগ, সঙ্কট যাতে তৈরি না হয়, সেজন্য গত ৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ঐ কমিটির কাজ শেষ না হওয়ার আগেই পে-স্কেলের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এমনকি টাইম স্কেল-সিলেকশন গ্রেডের যে বিকল্প প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদন করিয়েছিলেন তার কোনো প্রতিফলনও নেই পে-স্কেলে। এ দুটি ঘটনার পেছনে আমলাদের হাত থাকতে পারে বলে অভিযোগ শিক্ষক নেতাদের। যে কারণে আমলাদের সঙ্গে শিক্ষকদের একটা মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতেই শিক্ষক নেতারা সমস্যা নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এ নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
আন্দোলনরত শিক্ষক নেতারা বলেন, আমাদের দাবির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী প্রস্তাব দিতে বলেছেন। আমাদের দাবি পূরণের বিষয়ে অঙ্গীকার করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। কাজেই আমরা অর্থমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পূরণ চাই। এর মাঝে নতুন কোনো প্রস্তাব নিয়ে আমরা ভাবিনি। এরপরও শিক্ষামন্ত্রী যেহেতু প্রস্তাব চেয়েছেন, তা তৈরি করতে হবে। এ নিয়ে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতাদের সাথে বসতে হবে।