তিন দিনের টানাবর্ষণ ও অমবষ্যার জোয়ারের পানিতে ফের প্লাবিত হয়েছে কুতুবদিয়া। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার প্রায় সবকটি গ্রাম। বাদ যায়নি সদও ইউনিয়ন বড়ঘোপও। এযাবতকালের স্মরনীয় বর্ষণ এটি। পানিতেই যেন ভাসছে কুতুবদিয়া। বানের লোনা পানিতে ঘর ডুবে যাওয়ায় নির্ঘুম রাত যাপন করছে হাজার হাজার পরিবার। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কৃষক ও মাছ চাষিরা।
৬ জুলাই উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়নের দক্ষিণ ও মধ্যম অমজাখালী বেড়িবাঁধ এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, অমাবষ্যার জোয়ারের পানি নির্দিধায় ডুকে পড়ছে লোকালয়ে।
বিলীনহওয়া বেড়িবাঁধ সাগরের পানির সাথে মিশে যাওয়ায় সাগর ও লোকালয়ে ঢুকে পড়া পানির স্থর যেন একাকার। বুঝার কোন সুযোগ নেই কোনটা সাগর আর কোনটা লোকালয়।
মধ্যম অমজখালী গ্রামের আবু তাহের জানান, সাগরের ভাঙনে ভিটে মাটি সব হারিয়েছেন। এখন শেষ আশ্রয়স্থল গৃহখানীও হারাতে বসেছেন তিনি। ঘরখানী রক্ষা করতে তিনি নিজ উদ্যোগে ঘরের পূর্ব দেয়ালের সাথে ঘেষে নতুন করে বেড়িবাঁধ দিয়েছেন ।
যদিও তিনি জানেন যে এতে তার শেষ রক্ষা হবেনা। তারপরেও বৃথা চেষ্টা কওে যাচ্ছেন তিনি।মুরালিয়া এলাকার বুলুআকতার জানান, জোয়ারের লোনা পানিতে তার ঘরটি সম্পূর্ণ ডুবে গেছে।
রাতে ঘুমানোর স্থানটুকুও নাই তার।আত্মীয়ের বাড়িতে স্থান নিতে হবে বলে জানালেন তিনি।
তাদের মত একই এলাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার নাজের হোসেন, তৌহিদুল ইসলাম, মোতাহারা বেগম, সাজেদা বেগমসহ আরো অনেকেই এই প্রতিবেদককে জানান, টেকসই ও স্থায়ী বেড়িবাঁধ না হওয়ার কারনে আমরা বারবার নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছি। আজ আমরা গৃহহারা হয়ে অন্যেও বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। তাদের এই দূর্গতবস্থা দেখার জন্য কেউ এগিয়ে না আসলেও এগিয়ে এসেছে গ্রীণ বেল্টট্রাস নামের একটি সংস্থা।
ঈদুলফিতর উপলক্ষ্যে এলাকার অসহায়দের মাঝে বিতরণ করেছে ঈদ বস্ত্র। ঈদ বস্ত্র পেয়ে এ অসহায়মানুষগুলো দারুনখুশি।
গ্রীণ বেল্টট্রাস চেয়ারম্যান জসীম কাতাবী বলেন, আমরা কুতুবদিয়ার অসহায় মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ভাগ করে নেয়ার কাজ করছি। স্থায়ী বেড়িবাঁধের দাবীতে স্থানীয় পর্যায়সহ জাতীয় পর্যায়েও আনন্দোলন গড়ে তুলেছি। ইন্শা-অল্লাহ কুতুবদিয়ার গণমানুষের দাবী আদায়ে সফল হবো। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র ক্ষত চিহ্ন এখনো শুকায়নি। প্রতিদিন চলছে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ সহ আর্থিক সহায়তা বিতরণ।
৬ জুলাই (বুধবার) অমাবষ্যার জোয়ারের পানি ও তিনদিনের টানা ভারি বর্ষণে দ্বীপের কায়ছার বাপের পাড়া, নয়াকাটা, ফয়জানীর বাপের পাড়া, মনছুর আলী হাজীর পাড়া, সতরউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়,মহাজন পাড়া, মফজল ডিলার পাড়া,মলমচর,আজম কলোনী, দক্ষিণ ও মধ্যম অমজাখালী, মুরালিয়া, সিকদারপাড়া, কালোয়ার ডেইল, সাইটপাড়া, হকদারপাড়া, কাহারপাড়া, তেলিপাড়া, আনিচের ডেইল, কুমিরাছড়া জেলেপাড়া ও তবালেরচওে উল্ল্যেখযোগ্য হারেঘর-বাড়ি,ক্ষেত-খামার ও মাছের ঘের পানিতেতলিয়ে গেছে।
তাছাড়া এমন কোন ঘর নেই যা পানি বন্দি হয়নি। বড়ঘোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ফরিদুল ইসলাম জানান, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে সাগরে পানিরস্থর বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারনে জোয়ারের পানিতে প্রতিনিয়ত প্লাবিত হচ্ছে কুতুবদিয়া।
আমি ইউনিয়ন পরিষদের তহবিল ও ব্যক্তিগত তহবীল থেকে খরচ কওে সাময়িকভাবে বেড়িবাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছি। অমজাখালী এলাকায় নিজ অর্থে অস্থায়ী বেড়িবাঁধ দেয়ার কথা জানান তিনি।
পাউবো কক্সবাজার’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মুহাম্মদ নজরুল ইসলামকে মোবাইলে যোগাযোগ কওে না পেলেও গত তিন মাস পূর্বে তিনি জানিয়েছিলেন, বর্ষামৌসুমের আগেই জরুরী ভিত্তিতে কাজ শুরু করার জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক চিহ্নিত কুতুবদিয়া রক্ষা বেড়ি বাধেঁর ৭১ নং পোল্ডারের ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোর মধ্যে দক্ষিণ তাবালেরচর ২৯ কি.মি এ ১৭০০ মিটার পর্যন্ত ব্লক (পাথরদিয়ে তৈরি) ও মাটির কাজ হবে।
তাছাড়া চর ধুরুং ১৩ কিমি,দক্ষিণ অমজাখালী ৩৫ কিমি, সতরুদ্দিনের ৪ কিমি এবং উত্তর ধুরুংয়ের কালামার পাড়া, চুল্লারপাড়া পয়েন্টসহ গত বছরের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁেধর ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে বর্ষাও আগেই কাজ শুরু করবে পাউবো।
এদিকে গত ২৪ এপ্রিল ৪টি প্যাকেজের দরপত্র আহবান করে টেন্ডার হওয়ার কথা থাকলেও তা বাতিল হয়ে ১৯ মে দরপত্র আহবানের নতুন তারিখ নির্ধারণ করছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কোনবারই দরপত্র আহবান শেষ করতে পারেনি বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
ফলে বর্ষাও আগে কাজ শুরু করাতো দূরের কথা বর্ষার পরেও পাউবো বেড়িবাঁধ সংষ্কারের কাজ শুরু করতে পারবে কিনা তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
কুতুবদিয়ার অসহায় মানুষের এমন দূর্যোগের মুহূর্তে দ্বীপের জনদরদী নেতৃবৃন্দরা এককাতাওে এসে দ্বীপবাসীর জীবন বাঁচানোর অধিকার আদায়ে একযুগে কাজ করলেশুধু স্থায়ী বেড়িবাঁধ কেন সকল ন্যায্য দাবী আদায় সম্ভব বলে মনেকরেন দ্বীপের সচেতন মহল।