টেকনাফ উপজেলার হ্নীলায় পাহাড় কাটায় হুমকির মুখে পড়েছে প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো তিনটি প্যাগোডা (জাদি)। পাহাড়চূড়ায় পাশাপাশি এই তিনটি জাদির অবস্থান। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এই তিনটি প্যাগোডা স্থানীয়ভাবে ‘চাতোপা জাদি’ নামে পরিচিত।
হ্নীলা উচ্চবিদ্যালয়ের বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য দুই সপ্তাহ ধরে কাটা হচ্ছে জাদি পাহাড়। পাহাড়ের মাটি দিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের কাজ চলছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুন ভবন নির্মাণের জন্য পাহাড়ের কিছু অংশ কাটার কথা স্বীকার করলেও তাতে প্যাগোডার কোনো ক্ষতি হবে না বলে দাবি করেছে।
স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতা মং চালু চৌধুরী বলেন, তিনটি জাদির একটির উচ্চতা ২৫ ফুট, একটি ৩০ ফুট আরেকটি ৩৫ ফুট। দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা এই জাদি দেখতে আসেন। প্রতিবছর পয়লা বৈশাখের আগে পুণ্যার্থীরা এখানে সমবেত হন। জাদিতে প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়।কিন্তু পাহাড় কাটার কারণে প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো এসব জাদির অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে।
গত ২৫ জানুয়ারি সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার হ্নীলা উচ্চবিদ্যালয় ও ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়-সংলগ্ন বৌদ্ধ জাদি পাহাড়ের একপাশ খাড়াভাবে কাটা হয়েছে। পাহাড়ের একপাশের গাছও কেটে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন, রবিউল আলম ও আয়েশা বেগম বলেন, খাড়াভাবে পাহাড় কাটায় বৌদ্ধজাদির পাশাপাশি কয়েকটি পরিবারের বসতভিটা, ফলদ এবং বনজ বাগানও হুমকির মুখে পড়েছে।
হ্নীলা উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিকদার বলেন, বিদ্যালয়ের জন্য পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করা হবে। কিন্তু জায়গার সংকটের কারণে পাহাড়ের কিছু অংশ কেটে সমতল করা হচ্ছে। এতে জাদির কোনো ক্ষতি হবে না। একই কথা বলেছেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালামও।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, প্যাগোডা হুমকির মুখে ফেলে পাহাড় কাটার বিষয় নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।
উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে হ্নীলা এলাকার তহসিলদার মো. আক্তারুল ইসলাম বলেন, এ জাদি পাহাড়ের মালিক জেলা প্রশাসক। পাহাড়চূড়ায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্যাগোডা থাকায় তাঁরা সেটি দেখাশোনা করেন। পাহাড় না কাটতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে বলা হলেও তারা কথা শুনছে না।
জানতে চাইলে বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন টেকনাফের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা জাদি সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি ক্যাথিংজ চৌধুরী বলেন, এই তিনটি পুরাকীর্তি রক্ষায় সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের এগিয়ে আসা উচিত। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে জাদি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সর্দার শরীফুল ইসলাম বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শফিউর আলম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। পাহাড় কাটা বন্ধ করতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠাব।