দীর্ঘদিন পর লবণের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে লবণশিল্পের মানুষগুলো প্রাণচাঞ্চলতা ফিরে পেলেও টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপের হাজারো একর লবণ মাঠ এখনো অনিশ্চিয়তার মধ্যে। লবণের ভরা মৌসুমেও ওই এলাকার চাষিরা হতাশার মধ্যে দিন যাপন করছেন।
উপজেলায় ৪ হাজারের অধিক একর জমিতে লবণচাষ ও উৎপাদন পুরোদমে চলছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার উৎপাদিত লবণের দাম তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে চাষিদের মুখে হাসি ফুটালেও টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ লবণ মাঠের চাষিদের মাঝে বিরাজ করছে হতাশা।
শাহপরীর দ্বীপের ভাঙা বেড়িবাঁধের কারণে গত চার বছর ধরে সাবরাং হারিয়াখালী থেকে শাহপরীরদ্বীপ পর্যন্ত দেড় হাজার একর জমিতে লবণচাষ বন্ধ রয়েছে। ফলে হাজারেরও অধিক চাষির জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। তবে শাহপরীরদ্বীপ লবণ চাষাবাদের নির্ধারিত স’ানে বিসিকের একাধিক বড় সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হলেও বিধ্বস্ত বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে ওই জমিতে লবনচাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এ মৌসুমে লবণচাষের সম্ভাবনা নেই বলে জানান স’ানীয় চাষিরা। তাই লবণশিল্পরক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে ভাঙা বাঁধ মেরামতের দাবি করছেন চাষীরা।
এদিকে টেকনাফ বিসিক শিল্প লবণকেন্দ্র জানায়, উপজেলায় লবণচাষের জন্য ৫ হাজার ১৬ একর জমি রয়েছে। জমিগুলো হচ্ছে টেকনাফ, সাবরাং, শাহপরীরদ্বীপ, দক্ষিণ ও মধ্যম হ্নীলায়।
গতবছর ৪ হাজার ৭ একর জমিতে লবণ উৎপাদন হয়েছে। হোয়াইক্যং ইউনিয়নে ১৪৪৯ জন লবণচাষির ১০৭৪ একর, হ্নীলায় ১৯৯০ জন লবণচাষির ১৫৪৩ একর, টেকনাফ সদর ও পৌরসভায় ১০৯ জন লবণচাষির ২৪৭ একর, সাবরাংয়ে ৪৮০ জন লবণচাষির ১০০৮ একর, শাহপরীরদ্বীপে ৯০ জন লবণচাষির ৩৬ একর জমিতে পলিথিন পদ্ধতিতে লবণচাষ করা হয়। এতে এক লাখ ৪ হাজার মে. টন লবণ উৎপাদন হয়েছিল। গতবছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় উৎপাদন আশানুরূপ হয়েছে। লবণ উৎপাদনের মৌসুম হিসাবে ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত সময়কে ধরা হয়েছে। এ সময়ে চাষাবাদ ও উৎপাদনের পুরোদমে কাজ চলছে।
বিসিক আরও জানান, সারা দেশে এবার লবন উৎপাদনের টার্গেট ১৯ লাখ মেট্রিক টন। তন্মধ্যে কক্সবাজারে ১৮ লাখ মে. টন লবণ উৎপাদনের টার্গেট রয়েছে। এ মৌসুমে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিসিক মাঠ পর্যায়ে লবণ নিয়ে কাজ শুরু করবে। পরে মৌসুমের লবণ উৎপাদনের সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে।
তবে প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় লক্ষমাত্রা অতিক্রম করে লবণ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ বছর চাষিরা এক মাস আগে থেকেই লবণ উৎপাদন শুরু করেছে। তাই লক্ষমাত্রার অধিক লবণ উৎপাদন হবে, এমনটা আশা করা হচ্ছে। তাছাড়া আগের চেয়ে লবণের দাম তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে চাষিদের মুখে হাসি দেখা দিয়েছে। এ দাম অপরিবর্তিত থাকলে অন্য বছরের লোকসানও অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে তারা ধারণা করা করছেন।
টেকনাফ সাবরাংয়ের লবণ চাষি মো. মোস্তাক আহম্মদ জানান, লবণ মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদন ভাল হচ্ছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় লবণের দামও কয়েকগুণ বেড়েছে। এ মৌসুমে আবহাওয়া ভাল থাকলে উৎপাদন ভাল হবে। তবে দাম অপরিবর্তিত বা কিছু কম থাকলেও আগের লোকসান অনেকটা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত শাহপরীরদ্বীপ মাঠের লবণচাষি মো. নুর মোহাম্মদ জানান, চার বছর ধরে ভাঙা বেড়িবাঁধের কারণে হাজার হাজার একর জমি জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
এখন লবণের ভরা মৌসুম চলছে। এ ভরা মৌসুমেও লবণ মাঠে চাষ করতে না পেরে হতাশায় দিন কাটাতে হচ্ছে। তিনি লবণচাষিসহ এলাকাবাসীকে রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে শাহপরীরদ্বীপ ভাঙা বেড়িবাঁধ মেরামতের দাবি জানান।