টেকনাফ স্থলবন্দরের শ্রমবাজার সমপূর্ণভাবে রোহিঙ্গাদের দখলে চলে গেছে। এর সুবিধাস্বরূপ কর্তাব্যক্তিরা মাসোহারা নিয়ে সবকিছু সামাল দিচ্ছেন। এদিকে স’ানীয় শ্রমিকদের মধ্যে চলছে বেকারত্ব আর অভাব-অনটন। বাংলাদেশের ১২টি স’ল বন্দরের মধ্যে সর্বদক্ষিণে টেকনাফ-মায়ানমার স’লবন্দর নাম হলেও প্রকৃত পক্ষে এ বন্দরটি হচ্ছে নৌবন্দর। এই বন্দরে আমদানি-রপ্তানি হয় নৌপথে। ১৯৯৫ সালে ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ-মায়ানমার স’লবন্দর নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ হয়। এরপর থেকে বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়।
সেই থেকে বন্দরের আমদানি-রপ্তানির মালামাল ওঠানামায় নিয়োজিত ছিল দেশীয় শ্রমিকেরা। এ শ্রমিকেরা যখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ শুরু করে এবং ট্রেড ইউনিয়ন করার উদ্যোগ নেয়, তখন বন্দরের এক শ্রেণির ব্যবসায়ী নামধারী চোরাচালানীরা প্রশাসনের আড়ালে থেকে শ্রমিকদের ন্যায্যমূল্য না দেওয়ার মানসে দেশীয় শ্রমিকদের ওপর নানা নির্যাতন-নিপীড়ন, ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিতকরণ, দৈনিক বেতন বাকি রাখা ইত্যাদি কষ্ট দিয়ে বন্দর থেকে বিতাড়িত করে।
এরপর থেকে মায়ানমার থেকে আগত রেজিস্টার্ড-আনরেজিস্টার্ড ব্যাপক রোহিঙ্গা শ্রমিককে কাজ দেয়। এদের নাই কোনো বাংলাদেশি বৈধ পাসপোর্ট, নেই নাগরিকত্ব, নেই স’ায়ী ঠিকানা। স’ানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধির মদদপুষ্ট ব্যক্তি রোহিঙ্গা মাঝিদের সাথে আঁতাত করে বন্দরে শ্রমিক নিয়োগ প্রদান করে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শ্রমিক মাঝি ইলিয়াছ জানান, তার শ্রমিক কোনো বিরতি ছাড়া হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে ২৫০-৩৫০ টাকা দৈনিক বেতন পায়। এবং বাংলাদেশি শ্রমিক হলে ৫ শত টাকা দিতে হয়। তার ভাষ্য মতে, বন্দরে বর্তমানে শতাধিক মাঝি নিয়মিত কাজ করে। প্রতিটি ট্রাক থেকে ৫-৬ হাজার টাকা, আবার প্রতিটি বোট হতে ১০-১৫ হাজার টাকায় লোড-আনলোড করা হয়। অথচ আমাদের শ্রমিকদের দিতে হয় দৈনিক ২৫০-৩৫০ টাকা। এব্যাপারে বেশ কয়েকজন শ্রমিক মাঝির সাথে কথা বলে জানা যায়, রোহিঙ্গা শ্রমিক থেকে যে টাকা কর্তন করা হয় সে টাকার সিকি পরিমাণও আমরা পাই না। এদের এক ভাগ জনপ্রতিনিধি, একভাগ বন্দর, একভাগ রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা পায়।
সূত্রে জানা যায়, বন্দরে নিয়োজিত রোহিঙ্গা শ্রমিকেরা বন্দরের কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন মালামালের সাথে ইয়াবা ট্যাবলেট দেশের অভ্যন্তরে চালান দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। কারণেই বন্দরের ব্যবসায়ী, সিএন্ডএফ ও অন্যান্য সংস’া এদের েজিইয়ে রেখেছে। এদিকে স’ানীয় শ্রমিকদের বন্দরে কোনো স’ান না হওয়ায় টেকনাফের অভিজ্ঞমহল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বন্দরটি কি বাংলাদেশের নাকি মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের? স’ানীয় শ্রমিকেরা যদি বন্দরে কাজ না পায়, ওরা তাহলে কোথায় যাবে? তাই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার জন্য জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
টেকনাফ উপজেলা জাতীয় শ্রমিক পার্টির সভাপতি আবদুল মোতালব আতিয়ার টেকনাফ স’লবন্দরে রোহিঙ্গা শ্রমিকদের বাদ দিয়ে স’ানীয় শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়ার আহবান জানান।
এব্যাপারে টেকনাফ স’লবন্দর ইনচার্জ জসিম উদ্দিন জানান, টেকনাফ বন্দরে শ্রমিক নিয়োগের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে ইজারাদার মালিকেরা। তবে বন্দরে স’ানীয় শ্রমিকের পাশাপাশি রেজিস্টার্ড কিছু রোহিঙ্গা কাজ করছে।