মহান মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের আরও ১২টি মামলা আসছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে। মামলাগুলোর তদন্ত কাজ শেষের দিকে। ইতোমধ্যে এগুলো সংশ্লিষ্ট প্রসিকিউটরদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিচার চলছে ১৭ মামলায় অভিযুক্ত প্রায় অর্ধশত আসামির। ট্রাইব্যুনাল দুই শিফটে বিচারকাজ চালালেও মামলাজটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তদন্ত শেষ হলে বা চলার সময়ই প্রসিকিউটররা ওই ১২টি মামলার আসামিদের গ্রেফতার চেয়ে আবেদন করবেন। গ্রেফতারের পর তদন্ত সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া সব তথ্য ট্রাইব্যুনালে জমা দেবেন মামলার প্রসিকিউশন পক্ষ। মামলার পরবর্তী কার্যক্রম চলবে নিয়মানুসারেই। তদন্ত শেষে যত দ্রুত সম্ভব মামলাগুলোকে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে পাঠানোর আশা ব্যক্ত করেছে তদন্ত সংস্থা।
এদিকে প্রসিকিউশনের আশঙ্কা- তদন্ত সংস্থায় এখন যে পরিমাণ অভিযোগ জমা পড়েছে তাতে ট্রাইব্যুনালে মামলাজট দেখা দিতে পারে। এ কারণে আবারও দুটি ট্রাইব্যুনাল চালুর পক্ষে মত দিয়েছে প্রসিকিউশন।
তদন্তাধীন মামলার পাশাপাশি আরও কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে ওই যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। যাদের নাম তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান। তিনি বলেন, শীর্ষ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এখন মাঠ পর্যায়ের কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। এসব জায়গায় অগণিত মামলা রয়েছে। তাই মামলার সংখ্যা আরও বাড়বে।
তদন্তাধীন গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার সরাইকান্দি গ্রামের মৃত মনি মিয়ার ছেলে এনায়েত মোল্লার মামলার দায়িত্বে রয়েছেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা। তদন্ত শেষে ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যালয়ে আসার অপেক্ষায় রয়েছে কক্সবাজারের পেকুয়া থানাধীন মগনামা গ্রামের মহসীন হায়দার চৌধুরীর মামলাটি। এ ছাড়াও তদন্ত চলছে ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানার আবুল ফালাহ মুহাম্মাদ ফাউজুল্লাহর বিরুদ্ধে। নেত্রকোনা জেলার খারচাইল গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর ছেলে আব্দুল খালেক তালুকদারের মামলাটি তদন্তের শেষ পর্যায়ে। এ মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রসিকিউটর রানা দাশ গুপ্ত ও তাপস কান্তি বলকে।
এ ছাড়া বাগাজুরা গ্রামের মৃত মস্ত মিয়ার ছেলে আল বদর কমান্ডার শামসুল হক, জামুরা গ্রামের ফরজান মিয়ার ছেলে রাজাকার কমান্ডার নেছার আলী ও সোনাটিকি গ্রামের সুরুজ মিয়ার ছেলে রাজাকার কমান্ডার ইউনুছ মৌলভীর বিরুদ্ধে এবং ভালুকজান গ্রামের মৃত নায়েব আলী ফকিরের ছেলে মো. রিয়াজ উদ্দিন ফকিরের (৭০) বিরুদ্ধে মামলা তদন্ত চলছে।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, আমরা আগে থেকেই বলছি, আরও ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। সব রাজাকারের শাস্তি নিশ্চিত করা, দল হিসেবে জামায়াতের বিচার এবং ১৯৫ পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সমাপ্ত করতে হলে জেলায় জেলায় ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের বিষয়টিও আগামীতে ভাবতে হবে বলে মত দেন এই মুক্তিযুদ্ধ গবেষক।
প্রসিকিউটর রানা দাশ গুপ্ত মনে করেন আগামীতে যে পরিমাণ মামলা একসঙ্গে হাজির হবে তাতে একাধিক ট্রাইব্যুনাল না থাকলে বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা বাড়বে।