পর্যটন পরিবেশ রক্ষায় কক্সবাজারের দুটি ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের অন্যত্রে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা সরকার গ্রহণ করলেও তার কোন অগ্রগতি নেই। ফলে রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচারণ ও নানা অনৈতিকতার কারণে কক্সবাজারের পর্যটন পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকায় এলাকার সার্বিক পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি হচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফের দুটি শরণার্থী ক্যাম্পে ৩৩ হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করছে। তাছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ৩ থেকে ৫ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করার বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসলেও সঠিক পরিসংখ্যান কারো জানা নেই। এসব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সহ বিভিন্ন দাবী দাওয়া নিয়ে উখিয়া, টেকনাফ দুই উপজেলায় গঠিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন করা হলেও তা ফলপ্রসু হয়নি। নিয়ন্ত্রণহীন এসব রোহিঙ্গাদের অনেকেই ইয়াবা পাচার, চোরাচালান, পতিতাবৃত্তি, চুরি, ডাকাতি, খুন, রাহাজানি সহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় পর্যটন শহর কক্সবাজারের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
২০১৪ সালের ৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, কক্সবাজারের দুটি শিবিরে রোহিঙ্গারা মানবেতর দিনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। মানবিক কারণে তাদের প্রশস্থ স্থানে বসবাস করার সুযোগ করে দেওয়া দরকার। সূত্রে জানা যায়, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসন হাতিয়াদ্বীপের পূর্বাঞ্চলের চরটি রোহিঙ্গাদের জন্য নির্বাচন করে। স্থানীয়ভাবে ঠেংগার চর নামে পরিচিত ওই এলাকায় বন বিভাগের ১২ হাজার একর জমি রয়েছে। এ সময় নোয়াখালী জেলা প্রশাসন উক্ত জায়গা সার্ভে করে ৫শত একর জমি অধিগ্রহণ করার জন্য বন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। তার আলোকে বন মন্ত্রণালয়ের জায়গা বুঝে নেওয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়কে একটি নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। দীর্ঘ দিনেও রোহিঙ্গা স্থানান্তর প্রক্রিয়া তরান্বিত না হওয়ায় রোহিঙ্গারা মনে করছেন স্থানান্তর প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য তাদের প্রতিবাদের কারণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ রোহিঙ্গা স্থানান্তর প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে গেছে।
এদিকে গত ১২ ফেব্র“য়ারি থেকে উখিয়া, টেকনাফে শুরু হওয়া রোহিঙ্গা নিবন্ধনের ধারাবাহিকতায় সীমান্তে অনুপ্রবেশ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে বলে একাধিক সূত্র দাবী করলেও সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যরা তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের আটক করে তাদের খাদ্য ও মানবিক সেবা দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। স্থানীয় গ্রামবাসীর দাবী, বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গারা কুতুপালং বস্তি, নিবন্ধিত ক্যাম্প সহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, এসব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হলেও তাদেরকে নোয়াখালীর পূর্বাঞ্চলের পূর্ব নির্ধারিত জায়গায় স্থানান্তর করা জরুরী হয়ে পড়েছে। তা নাহলে পর্যটন শহর কক্সবাজারের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হবে। পাশাপাশি দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হবে উখিয়া টেকনাফের ৫ লক্ষাধিক মানুষকে।