কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের কলাতলী সংযোগ সড়ক পুনর্র্নিমাণ কাজ চলছে ঢিমে তেতালায়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন ওই সড়কে চলাচলকারী স্থানীয় মানুষ ও দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। সড়কের বেহাল দশার কারণে ইনানী ও হিমছড়ির হোটেলগুলোতে যাচ্ছে না কোনও পর্যটক। এর প্রভাব পড়ছে পর্যটন শিল্পে। বিকল্প সড়ক হিসেবে এক কিলোমিটার সৈকতের উপর দিয়ে যান চলাচলের কারণে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রের তীর ধরে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেরিন ড্রাইভ সড়কটি ২০১৭ সালের ৬ মে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু মেরিন ড্রাইভের শুরুর দিকে কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে বেইলি হ্যাচারি মোড় পর্যন্ত প্রায় ১৩শ মিটার সড়ক ২০০০ সালে সামুদ্রিক ভাঙনে বিলীন হয়ে গেলে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০০৫-০৬ সালে কলাতলী গ্রামের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া সড়কটিকে সামান্য প্রশস্ত করে মেরিন ড্রাইভের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লে পৌর কর্তৃপক্ষ সংস্কারের উদ্যোগ নেয়।
গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত তিন মাসের জন্য কলাতলীর গ্রামীণ সড়কটি সংস্কারের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে সড়কটি বন্ধ করে দেওয়া হলে শহরের সঙ্গে মেরিন ড্রাইভ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ মেরিন ড্রাইভের বেইলি হ্যাচারি পয়েন্ট থেকে সমুদ্র সৈকতে ওঠানামার একটি বিকল্প পথ তৈরি করে। একইভাবে কলাতলী পয়েন্টেও মাটি দিয়ে ভরাট করে একই ধরনের রাস্তা তৈরি করা হয়। কিন্তু সমুদ্র সৈকত ধরে এ সড়কে যানবাহন চলাচল নির্ভর করছে সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার উপর। প্রতিদিন দুইবার সামুদ্রিক জোয়ারের সময় ৪-৫ ঘণ্টা করে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে শহরের একাংশের হাজার হাজার মানুষের জন্য যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে। এছাড়া সমুদ্র সৈকতে চলাচল করতে গিয়ে সামুদ্রিক জোয়ারের ধাক্কায় প্রতিদিন দুর্ঘটনাও ঘটছে। এ অজুহাতে যাত্রীবাহী অটোরিক্সা ও ইজিবাইকগুলো গাড়ির ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ী, দেশি-বিদেশি পর্যটক, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও কর্মী ও স্কুলগামী শিক্ষার্থী ছাড়াও মেরিন ড্রাইভ দিয়ে চলাচল করা শহরের কলাতলী, দরিয়ানগর, রামুর হিমছড়ি, উখিয়ার সোনারপাড়া, ইনানী, মনখালী, টেকনাফের শামলাপুর ও বাহারছড়ার মানুষ।
কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, ‘পৌরসভা কর্তৃপক্ষ তিন মাসের মধ্যে এই সংযোগ সড়কটি পুননির্মাণ কাজ শেষ করার কথা বললেও এখন পর্যন্ত শতকরা ৩০ ভাগ কাজও শেষ করতে পারেনি। সামনে বর্ষাকাল, সাগরে পানি বেড়ে যাবে। এতে সকাল-বিকাল যেসব গাড়ি চলতো সেগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ করে আসন্ন ঈদে কক্সবাজারে প্রচুর পর্যটক আসবে। সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ না হলে চরম ক্ষতির মুখে পড়বে মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে গড়া উঠা হোটেল, মোটেল ও রিসোট মালিকরা।
কক্সবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সংযোগ সড়কটির শতকরা ২৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজগুলো আগামী বর্ষার আগেই শেষ করা হবে। সড়কটির নির্মাণকাজ একটু দেরিতে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে কোনও সড়কের কাজ যেন দুর্বল না হয়। তাই আমরা সড়কটি এমনভাবে করতে চাই যাতে করে আগামী ১০০ বছরেও কিছু না হয়। সেভাবে খুব শক্ত করে কাজটি করার জন্য বলা হয়েছে এবং নিজে গিয়ে তদারকি করছি যাতে কোন অনিয়ম না হয়।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, কলাতলী মেরিন ড্রাইভ সংযোগ সড়কটির পুননির্মাণ কাজ চলছে। দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কক্সবাজার পৌরসভা এই কাজটি করছে। কাজটি খুব দ্রুত শেষ হবে বলে তারা আমাকে জানিয়েছে।