কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে কোন জায়গায় হত্যা করা হয়েছে, তা খুঁজতে আজ বুধবার কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসে যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল। সেখানে তারা দুটি স্থান ঘুরে দেখে।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লা সেনানিবাসের কফি হাউসে যান তদন্ত দলের কর্মকর্তারা। এ সময় তদন্ত দলের সঙ্গে দেখা করেন তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন। পরে তদন্ত দলের সদস্যরা সেনানিবাসের দুটি স্থান পরিদর্শন করেন। তদন্ত দলে ছিলেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ও তদন্ত সহায়ক দলের প্রধান আবদুল কাহার আকন্দ, সিআইডি কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার মো. নাজমুল করিম খান, সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহমেদ ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. নাজমুল করিম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কুমিল্লা সেনানিবাসের যে স্থানে তনুর লাশ ফেলা হয়, এর আশপাশের বিভিন্ন রাস্তা আমরা ঘুরে দেখলাম। তনুকে হত্যার সম্ভাব্য জায়গা কোথায় হতে পারে, সেগুলোও দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া ময়নামতি সেনানিবাসে ১৮, ২০ ও ২১ মার্চ তিনটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এর মধ্যে ২০ মার্চের অনুষ্ঠানে কারা গান করেছে, তাদের নাম খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহি জাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমুল করিম খান বলেন, ‘দুজনকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সার্জেন্ট জাহিদকে এখনো ঢাকায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন ও মা আনোয়ারা বেগম তাঁদের মেয়েকে নির্যাতনের দুটি স্থানের নাম সিআইডিকে জানান। একই সঙ্গে সেনানিবাসের যেসব কর্মকর্তা তাঁদের বাসায় যেতেন, তাঁদের নামও সিআইডিকে দেন।
তনুর বাবা ইয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘তনুর মা মঙ্গলবার সাংবাদিকদের যেসব কথা বলেছে, একই কথা সিআইডির তদন্ত দলকেও বলেছে। বুকের ভেতর কয়দিন চাপ দিয়ে রাখব কথা। খারাপ তিন-চারটা লোকের কারণে অনেকগুলো লোকের কেন বদনাম হবে? গত মঙ্গলবারের বক্তব্যের পর আমাদের ওপর কোনো চাপ আসেনি।’
অন্যদিকে, তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহি জাহিদের কাছে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হবে।’
এর আগে গত মঙ্গলবার সিআইডি কুমিল্লা দপ্তরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম, ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন ওরফে রুবেল ও চাচাতো বোন লাইজু জাহানকে। এ ছাড়া তনুর কলেজ সহপাঠী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইব্রাহীম খলিল শামীম (২২) ও ইসলামের ইতিহাস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসানকেও (২২) জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একই দিন শান্তা নামের এক সংগীতশিল্পীসহ আরও পাঁচজনকে সিআইডি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রাত নয়টা পর্যন্ত তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর লাশ ময়নামতি সেনানিবাস এলাকার একটি ঝোপে পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তনুর বাবা ইয়ার হোসেন পরদিন কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। প্রথমে কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাইফুল ইসলাম মামলার তদন্ত করেন। পরে তদন্তভার দেওয়া হয় জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মনজুর আলমকে। ১ এপ্রিল তদন্তের ভার দেওয়া হয় সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীমকে। এ ছাড়া তনুর লাশের প্রথম ময়নাতদন্ত হয় ২১ মার্চ। পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশনায় দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হয় ৩০ মার্চ। এরপর ৪ এপ্রিল প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এতে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি।