টানা ৩দিনের সরকারী ছুটিতে দেশের পর্যটন রাজধানী খ্যাত কক্সবাজারে এখন পর্যটকদের উপচে পড়া ভীড়। এর ফলে কক্সবাজার শহর, সমুদ্র সৈকত, বিপনী কেন্দ্র, রাস্তাঘাটসহ জেলার অন্যান্য পর্যটন স্পটসমূহ প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠেছে। রাস্তাঘাটে দেখা দিচ্ছে মারাত্মক ট্রাফিক জ্যাম। পর্যটকদের ভীড়ে শহর ও সাগরপাড়ের চার শতাধিক আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ ও সরকারী রেস্ট হাউসের সকল কক্ষ আগামী কাল ২১ ফেব্রুয়ারি রবিবার পর্যন্ত আগাম বুকিং হয়ে গেছে।
গতকাল শুক্রবার বিকালে সমুদ্র সৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, শহরের কলাতলী থেকে ডায়াবেটিক পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার সৈকতে মানুষ আর মানুষ। নারী-পুরুষ-তরুণ-তরুণী ও শিশুসহ আবাল বৃদ্ধ-বনিতার ভীড়ে হাঁটাও দুষ্কর। এদের মধ্যে কেউ কেউ সৈকতে হাঁটছেন, কেউবা চেয়ারে বসে গল্পগুজব করছেন, আবার কেউ কেউ সাগরে গোসলে মত্ত। অনেকেই বীচ বাইক ও ওয়াটার বাইকে চড়ে বীচ স্পোর্টস উপভোগ করছেন। গত ঈদের পরে একদিনে এত সংখ্যক মানুষ আর আসেনি বলে জানান রবি লাইফ গার্ড কর্মী আবুল হোসেন।
তিনি জানান, সাধারণত ঈদের পরদিন থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত কক্সবাজারে পর্যটকদের বেশ ভীড় থাকে। এসময় হোটেল-মোটেলে কক্ষ সংকট দেখা দেয়। কিন্তু সাপ্তাহিক ছুটির সাথে ২১ ফেব্রুয়ারির ছুটি যোগ হয়ে টানা ৩দিনের সরকারী ছুটি পড়ায় এই শুক্রবারে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক এসেছেন কক্সবাজারে।
কক্সবাজার সৈকতের কিটকট (চেয়ারছাতা) ব্যবসায়ী আবুল হাশেম জানান, শুক্রবার পর্যটক ও স্থানীয়সহ অন্তত ২ লাখ মানুষ কক্সবাজার সৈকতে বেড়াতে এসেছেন।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব ওমর সোলতান কোম্পানী জানান, শহরের আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ ও সরকারী রেস্ট হাউসে প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার মানুষের রাত যাপনের সুবিধা রয়েছে। কিন্তু শুক্রবার থেকে কক্সবাজারে পর্যটকদের ভীড়ে আগামী রবিবার পর্যন্ত শহরের সকল আবাসিক হোটেল-মোটেল ও রেস্টহাউস আগাম বুকিং হয়ে গেছে। কেউ আগাম বুকিং বাতিল না করলে রবিবার পর্যন্ত নতুন কোন অতিথিকে কক্সবাজারে ঠাঁই দেয়া সম্ভব নয়।
এদিকে কক্সবাজারে পর্যটকদের এই ভীড়কে পুঁজি করে গলাকাটা ব্যবসা ফেদেছে একশ্রেণীর হোটেল মালিক ও কক্ষ দালাল। তারা আসল ভাড়ার ৩/৪ গুণ হারে ভাড়া নিচ্ছে পর্যটকদের কাছ থেকে।
ঢাকা থেকে বুকিং না করে আসা পর্যটক দম্পতি তোফা করিম ও রেজাউল করিম জানান, টানা ৩দিনের সরকারী ছুটি পড়ায় এবং সেসাথে জ্যোৎ¯œা রাত হওয়ায় সপরিবারে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন তিনদিনের জন্য। রবিবার রাতে আবারও ফিরে যাবেন ঢাকায়।
চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে আসা দম্পতি আসিফুল মওলা ও নাসিমা কক্সবাজারে হোটেল না পেয়ে রাতেই ফিরে যাবেন বলে জানান।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন -টোয়াক বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান জানান- শুক্রবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ছাড়াও সেন্টমার্টিন, হিমছড়ী, দরিয়ানগর, ইনানী, সাফারী পার্ক, ন্যাশনাল পার্ক ও মহেশখালীর আদিনাথে ছিল পর্যটকদের ঢল।
পর্যটকদের এমন ভীড়ের সুযোগে কোন দূর্বৃত্ত যাতে অঘটন ঘটাতে না পারে তারজন্য ট্যুরিস্ট পুলিশও সতর্ক রয়েছে বলে জানান কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন।
তিনি জানান, পর্যটকদের চাপ থাকায় তাদের নিরাপত্তা বিধানে পর্যটন স্পটসমূহে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার সৈকতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলে পর্যটকদের রাতদিন ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তা বিধান করছে পুলিশ।