পার্বত্য শান্তি চুক্তি সকল ধারা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সামরিক শক্তি দিয়ে নয়, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিক ভাবে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই আমরা পার্বত্য শান্তি চুক্তি করেছিলাম। ইতোমধ্যে অনেক ধারাই বাস্তবায়ন হয়েছে। আগামীতে শান্তি চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হবে। আজ বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ কথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে এ সংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন রাঙ্গামাটি থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার। জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের জীবন জীবিকার উন্নয়নে যাবতীয় ব্যবস্থা আমরা করেছি। যারা চাকরি চেয়েছিল, আমরা তাদের চাকরি দিয়েছি। ভারত থেকে ৬৪ হাজার শরণার্থী ফেরত এনেছি। তাদের জীবন জীবিকার জন্য যা যা করা দরকার তা আমরা করেছি। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের কর্মকর্তাদের সহায়তা পেলে আরো দ্রুত করা সম্ভব হতো।
শেখ হাসিনা বলেন, হঠাৎ করেই চুক্তি করেছি, তা নয়। আমি ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর ওই অঞ্চলের যখনই কোন ঘটনা ঘটেছে আমি তখনই ছুটে গেছি। সমস্যার বিষয়গুলো আমার জানা ছিলো, সমাধানের পথ কি তা নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করেছি। আমরা সব সময় বলেছি, সমাধান হবে সংবিধানের ভেতরে থেকে।
তিনি আরো বলেন, যখন চুক্তি হয় বিএনপি-জামায়াত তার বিরোধীতা করেছিল। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, এই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের ফেনী পর্যন্ত ভারত হয়ে যাবে। উনি(খালেদা) তখন ফেনীর সংসদ সদস্য। উনাকে প্রশ্ন করেছিলাম, ফেনী যদি ভারত হয়ে যায়, তাহলে কি উনি ভারতে সংসদে গিয়ে বসবেন। তিনি বলেন, যেদিন অস্ত্র সমর্পন হয়, সেদিন বিএনপি পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় হরতাল-অবরোধ ডেকে ছিল, যাতে অস্ত্র সমর্পন না হয়। নিরাপত্তার সকল বাধা উপেক্ষা করে এই ১০ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রামে সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এয়ারপোর্ট করতে হলে, পাহাড় কেটে করতে হবে। সেটা পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য ভাল হবে না। আমরা রাস্তা করে দিচ্ছি, কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বেশী দূরে নয়। প্রশস্ত রাস্তা আছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সৌন্দার্য উপভোগ করার জন্য রাস্তা দিয়ে চলাই সুন্দর হবে। এয়ারপোর্টের দরকার নেই।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হানিসা বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজের নির্মাণ কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি স্থগিত করে। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে বিশ্বব্যাংকের সে অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়। তিনি আরো বলেন, তবে এক পর্যায়ে বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে আবারও ফিরে আসার ঘোষণা দিলেও নতুন নতুন শর্তারোপ করে দীর্ঘসূত্রতার পথ অবলম্বন করেছিল। এ কারণে বিশ্ব্যাংকের ঋণ না নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সাহসী ও স্বাধীনচেতা নেতৃত্ব ও দৃঢ় সিদ্ধান্তের ফলেই সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হয়। এ সেতু নির্মাণে অন্য কোনও দেশ থেকে ঋণ নেওয়া হচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের আওতায় পদ্মা সেতুতে ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের গ্যাস সঞ্চালন পাইপাইন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। গ্যাসপ্রাপ্তি ও পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের অর্থায়ন প্রাপ্তি সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গ্যাস পাইপলাইন সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও রয়েছে। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের জন্য পায়রা বন্দরে একটি ল্যান্ডবেসড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনাও সরকার নিয়েছে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পৃথিবীর বৃহত্তম হাইওয়ে সেতুর মধ্যে (ভায়াডাক্টসহ) পদ্মা সেতুর অবস্থান ২৫তম। তবে নদীর ওপর নির্মিত সেতুর মধ্যে এ সেতুর অবস্থান প্রথম এবং ফাউন্ডেশনের গভীরতার দিক থেকেও এ সেতুর অবস্থান প্রথম।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। নাশকতার মামলায় যারা জামিন পেয়েছে, তারা যাতে আবারও অনুরূপ অপতৎপরতা চালাতে না পারে, সেজন্য তাদের নিবিড় নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এছাড়া বিদেশি নাগরিকদের বসবাসের এলাকা ও চলাচলের রাস্তাগুলোতে গোয়েন্দা কার্যক্রম অধিকতর জোরদার করা হয়েছে। ডিপ্লোমেটিক এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ চলমান টহল আরো নিবিড় ও চেকপোস্ট ডিউটি জোরদার করা হয়েছে।
তিনি জানান, নিরাপত্তা ঝুঁকি পর্যালোচনা করে জনসাধারণের নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা নিশ্চিতেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পুলিশের মাধ্যমে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ জনসাধারণের সম্পদ ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রতিটি অভিযোগ যথাযথভাবে তদন্ত করে অভিযোগের গুরুত্বানুসারে চাকরি থেকে বরখাস্তসহ বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে বলেও তিনি সংসদকে জানান।