কক্সবাজার সি বিচে ভ্রমণকারীদের কাছে প্রতারণা ও যন্ত্রণার আরেক নাম ভ্রাম্যমাণ ফটোগ্রাফার! এখানে ঘুরতে গেলেই কানের কাছে এসে ঘ্যানর ঘ্যানর করবে বিচ দাপিয়ে বেড়ানো ফটোগ্রাফাররা। বলবে স্যার একটা ফটো তুলে দেই।
এরা সবাই নাছোড় বান্দা টাইপের। না বললেও সরতে চাইবে না। এদের উৎপাতে আরাম কেদারায় গা এলিয়ে দিয়ে প্রশান্তি মেলা দায়। আর কেউ যদি একবার তাদের কথায় সায় দেন তাহলেও রক্ষা নেই। ফটাফট অসংখ্য ছবি তুলবেন।
কয়েক মুহূর্ত পরেই ছবি হাতে অথবা পেনড্রাইভে ভরে হাজির হবেন। তখন আপনার চোখ কপালে উঠার মতো অবস্থা। আপনি হয়তো বলেছিলেন ৫টি ছবি তোলার জন্য। কিন্তু সে দুই’শ ছবি তুলে দিয়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা দাবি করছে।
আপনি বিল দিতে অস্বীকৃতি জানালে ভয়ভীতি দেখাবে। ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদানের মতো ঘটনাও ঘটেছে অনেক।
ঠিক তখন যদি ওই পরিমাণ টাকা আপনার কাছে না থাকে তাহলে অনুমান করতে পারেন আপনার অবস্থা। এই ফটো শিকারিদের হাতে হেনন্থা হওয়ার ঘটনা ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।
কিন্তু সেই দিন এখন বদলে যাচ্ছে। জোর করে কারো ছবি তোলা থাকল দূরের কথা বিরক্ত করলেই রক্ষা নেই ট্যুরিস্ট পুলিশের হাত থেকে। এমন তথ্যই জানিয়েছেন কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী সুপার রায়হান কাজেমী।
তিনি জানিয়েছেন, বিচের ফটোগ্রাফারদের ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। প্রত্যেকের আলাদা কোর্ড নম্বর থাকবে। কারো নামে অভিযোগ পাওয়া গেলে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তাকে তুলে (আটক) আনা হবে।
ফটোগ্রাফারদের বিশেষ পোষাক দেওয়া হবে। আর সেই পোষাকে থাকবে তাদের কোড নম্বর। কাউকে বিরক্ত করলে কোড নম্বর জানিয়ে দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডাটাবেজে থাকবে ফটোগ্রাফারদের নাম, ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর। কেউ যদি কোড নম্বর বলতে না পারেন তাহলে ছবি দেখিয়ে দিবেন। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন তিনি।
সবই ভালো উদ্যোগ। কিন্তু খোদ পুলিশ যদি অভিযোগ পাওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা না নেয়! যদি ফটোগ্রাফারদের সঙ্গে আতাত করে- তাহলে? এখানেও না-কি কঠোর ট্যুরিস্ট পুলিশের এই কর্তা।
সম্প্রতি নানা রকম অনিয়মের কারণে উনচল্লিশ পুলিশকে শাস্তিমূলক বদলী করা হয়েছে! কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে।
সীমাবদ্ধতার কথা উঠতেই কিছুটা হতাশার সুর দেখা গেলো তার কন্ঠে। বললেন, পর্যটন নগরী কক্সবাজারের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্য সংখ্যা মাত্র ১৩৯ জন। বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্র সৈকত এ ক’জন পুলিশের পক্ষে কতটুকু সম্ভব।
এখানে কেউ যদি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে তার জন্য কাছে কোনো হাসপাতাল নেই। আড়াই কিলোমিটার দূরে হাসপাতালে নিতে হয়। সেই হাসপাতালে যে দ্রুত নিবেন তার জন্য কোনো অ্যাম্বুলেন্স নেই আমাদের। অনেক দিন ধরেই অ্যাম্বুলেন্স আবেদন করে আসছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। অ্যাম্বুলেন্স একটি রয়েছে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে। আমার লাইফ গার্ড প্রয়োজন নেই। সে বিষয়েও অনেকবার বলেছি।
সুগন্ধা বিচের ঝিনুক মার্কেটে অবস্থিত ট্যুরিস্ট পুলিশের কন্ট্রোল রুমে বসে কথা হচ্ছিল এই পুলিশ কর্তার সঙ্গে। হাত উচিয়ে ঝিনুক মার্কেটের সামনে মাঠ দেখিয়ে বললেন, এখন দেখেন অনেক ঝকঝকে। আমরা ময়লা ফেলার জন্য ঝুড়ি রাখা বাধ্যতামূলক করেছি। কারো দোকানের সামনে ময়লা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বিচের কীটকট গুলোকে বলে দেওয়া হয়েছে সামনে পনের ফুট পেছনে বিশ ফুট পরিস্কার রাখতে হবে। কারো নির্ধারিত এলাকায় ময়লা পাওয়া গেলে তার কীটকট বন্ধ করে দেওয়া হবে।
বিনোদন জোন সুগন্ধা বিচের পরিচ্ছনতা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে বলেন, আপনি যদি আগে এসে থাকেন তাহলে দেখে থাকবেন সি ফুডের দোকানের ফেলা ময়লার ব্যাপক দুর্গন্ধ। মাছের উচ্ছিষ্ঠ ফেলার কারণে এই পথ দিয়ে যাতায়াত করা যেতো না। আমি বাইশ দফায় ভেঙ্গে দিয়েছি। তারপরও কাজ না হওয়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেল দেওয়ায় এখন পুরো টাইট হয়ে গেছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের নম্বর লেখা ব্যানার ফেস্টুন ঝুলছে সর্বত্র। যাতে কেউ সমস্যা পড়লে ট্যুরিস্ট পুলিশকে ফোন করতে পারে। এছাড়া ফেসবুকে ফ্যান পেজ রয়েছে! যাতে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার ফলোয়ার রযেছে। ফেসবুকে অভিযোগ দিলেও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে জানালেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, শুধু উদ্যোগ নিলেই হবে না, এজন্য পর্যটকদেরও সচেতন হতে হবে এবং আমাদের আশপাশের সবাইকে এ সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য উৎসাহী করতে হবে।