‘বিশ্ব শান্তি সম্মাননা’ লাভ করেছেন দেশের অন্যতম প্রধান কবি ও আর্টস ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক মুহম্মদ নূরুল হুদা। ভারতে ‘ওয়ার্ল্ড থিঙ্কারস অ্যান্ড রাইটার্স পিস মিট-২০১৫’ এর সমাপনী অধিবেশনে তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। ‘ধর্ম ও সংস্কৃতির বন্ধনে শান্তি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউটে ২৭ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই শান্তি সমাবেশের সমাপনী অধিবেশন ছিল ৩১ ডিসেম্বর। এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের কয়েকটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় ভারতের ‘ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর ইন্টার-কালচারাল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ (আইএসআইএসএআর)’ এই শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করে।
আইএসআইএসএআর এর সঙ্গে ওয়ার্ল্ড কনস্টিটিউশন অ্যান্ড পার্লামেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউসিপিএ); ইন্টারন্যাশনাল ফিলোসফারস অব পিস (আইপিপিএনও), যুক্তরাষ্ট্র; জি বি মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউশন, কলকাতা এবং ড. বি আর আম্বেদকর ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন, কলকাতা এই সম্মেলনের যৌথ আয়োজক। মানবজাতির জন্য টেকসই বিশ্ব শান্তি নিশ্চিতে যারা নিজ নিজ অঞ্চল ও তার বাইরে শান্তি আনয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন সাধারণত তাদেরকে এই শান্তি সম্মাননা দেওয়া হয়।
এ বছর আরও যারা শান্তি সম্মাননা পেয়েছেন তারা হলেন- যুক্তরাষ্ট্রের ড. গ্লেন টি মার্টিন ও ড. প্যাট্রিসিয়া এ মার্টিন, ভারতের স্বামী সুপ্রানন্দ, স্বামী আত্মাপ্রিয়ানন্দ, অধ্যাপক এস এ আর পি ভি চতুর্ভেদী, ড. ছায়া রাই, ই পি মেনন, ড. রাজেশ রাস্তগি, ড. রবি প্রতাপ সিং এবং ড. দাউজি গুপ্তা। এবার ‘আইএসআইএসএআর পিস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন ডব্লিউসিপিএ’র মহাসচিব ইউজিনিয়া আমান্দ। আমান্দ সারা বিশ্বে বেশ কয়েকটি পিস কমিটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
পাঁচ দিনের শান্তি সংযোগে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, ইসরায়েল, জাপান, নাইজেরিয়া, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুই শতাধিক কবি, লেখক, আইনজীবী, দার্শনিক, পিস অ্যাক্টিভিস্ট এবং গবেষক অংশ নেন।
বাংলাদেশ থেকে কবি নূরুল হুদার নেতৃত্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রের নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে গড়া একটি প্রতিনিধি দল এতে যোগ দেয়। সেমিনার, কবিতা পাঠ, আলোচনা, শান্তি শিক্ষা, প্রবন্ধ, সংগীত পরিবেশনা ও চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজনে সাজানো হয় পাঁচদিনের এই শান্তি সমাবেশ। ৩১ ডিসেম্বর সমাবেশের সমাপনী অধিবেশনে পালন করা হয় আন্তর্জাতিক লেখক দিবস, যা ২০০২ সালে প্রথম প্রস্তাব করে বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব। এছাড়া এদিন লেখক সমাবেশ শুরুর আগে বাংলাদেশে ‘কবিতার শান্তিযাত্রা-২০১৫’ শিরোনামে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। এই শান্তি সমাবেশ থেকে নতুন একটি পিস কমিটি গঠন করা হয়, যার প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন কবি নূরুল হুদা। চলতি বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে পরবর্তী শান্তি সমাবেশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ১৯৮৯ সালে দরিয়ানগর-খ্যাত কক্সবাজারে জন্ম নেওয়া মুহম্মদ নূরুল হুদা মূলত কবি। তবে কথাসাহিত্য, মননশীল রচনা, অনুবাদ, লোকসাহিত্য, মেধাস্বত্ব ইত্যাদি বিচিত্র বিষয়ে লেখেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থ-সংখ্যা শতাধিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে পড়ালেখা করা এই কবি বাংলা একাডেমির পরিচালক দায়িত্ব পালন করে অবসরে যান। তিনি বাংলা একাডেমির ফেলো, জেনেভাস্থ ওয়াইপো-র কনসালট্যান্ট, আমেরিকান ফোকলোর সোসাইটি, আইএসএফএনআর, এশিয়াটিক সোসাইটিসহ অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত সদস্য। কবি নূরুল হুদার কবিতা বিশ্বের নানাভাষায় অনূদিত। শিল্প-সাহিত্য ও সৃষ্টিশীলতার প্রয়োজনে তিনি সফর করেছেন পৃথিবীর নানা দেশ ও প্রান্ত। কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ একুশে পদকসহ পেয়েছেন প্রায় অর্ধশত পুরস্কার ও সম্মাননা। কুশলী এই সাহিত্য সংগঠক বর্তমানে বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব ও নান্দনিক কবিতা-আন্দোলন কবিতাবংলা-র সভাপতি। তিনি দরিয়ানগর কবিতামেলার প্রবর্তক।