দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ার কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ইউপি নির্বাচন। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগে প্রার্থী দেয়ার ব্যাপারে হিমশিম অবস্থায় শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। তবে প্রতিটি ইউনিয়নে ত্যাগী, জনপ্রিয় ও প্রকৃত আওয়ামীলীগের কর্মীকে চেয়ারম্যান পদে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। কিন্তু মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়ন থেকে নৌকা প্রতীকের মনোনয়নের জন্য বর্তমান চেয়ারম্যানকে সুপারিশ করায় স্থানীয় আওয়ামী পরিবারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দাবী বর্তমান চেয়ারম্যান কোন কালেই আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলনা। তিনি জনবিচ্ছিন্ন একজন মানুষ। এছাড়াও নারী কেলেঙ্কারীসহ নানা ধরণে অপকর্মে জড়িত তিনি।
সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে প্রথম বারের মত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন। এর ফলে স্থানীয় এই নির্বাচনটিতে এখন জনগণের ভোটের রায়ের চেয়ে দলীয় মনোনয়ন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই দলীয় মনোনয়নের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে আসছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের মধ্যে মনোনয়ন প্রতিযোগীতা চরমে। তাই প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী। সেখান থেকে বাছাই করে উপজেলা ও জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ১৫ ফেব্রুয়ারী দলীয় প্রধানের কাছে একটি তালিকা প্রেরণ করেছে। ওই তালিকায় মাতারবাড়ি থেকে দলীয় মনোনয়নের জন্য বর্তমান চেয়ারম্যানকে সুপারিশ করেছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা। মাতারবাড়িতে আওয়ামীলীগ থেকে একজন বাইরের লোককে মনোনয়নের জন্য সুপারিশ করায় আওয়ামী পরিবারের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
মাতারবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুল্লাহ জানান, এখন এলাকায় শোনা যাচ্ছে মাতারবাড়ি থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল হক রহুলকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। শীর্ষ নেতৃবৃন্দ যদি এই ধরণের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তাহলে সেটা হবে খুবই জঘন্য। কারণ বর্তমান চেয়ারম্যান কোনকালেই আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলনা। গতবারে তিনি টাকার বিনিময়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন। তিনি সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন একজন মানুষ। মাসে এক সপ্তাহও ভাল করে এলাকার মানুষ তাকে পাইনা। তার মত একজন অশিক্ষিত মানুষকে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হলে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা কোন ভাবেই তা মেনে নিবে না।
তিনি আরো জানান, মাতারবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সব সংগঠনের কোন নেতাকর্মীকে তিনি চিনেননা। মাতারবাড়ি এখন সরকারের বিশেষ নজরে। ধীরে ধীরে এটি উন্নয়নের মূল কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। সরকারের এই উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে আগামীতে চেয়ারম্যানের সর্বোচ্চ ভূমিকা থাকবে। তাই আওয়ামীলীগের একজন প্রকৃত কর্মীকেও যদি মনোনয়ন দেয়া হয় তাহলে সবাই ঐক্যবন্ধ হয়ে কাজ করে তার বিজয় নিশ্চিত করবে। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল হক রহুলকে দেয়া হলে সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত শ্রোতে অবস্থান নিবে আওয়ামী পরিবারের সকল সদস্যরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাতারবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের একজন নেতা জানান, বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল হক রুহুলের বিরুদ্ধে নানা ধরণের কু-কর্মের অভিযোগ রয়েছে। তার একটি বহুল আলোচিত নারী কেলেঙ্কারীর ঘটনা এখন এলাকার সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। এছাড়া মাসের বেশিরভাগ সময় এলাকার বাইরে অবস্থান করায় ইউনিয়ন পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। অনেক উন্নয়ন কর্মকান্ডও থেমে থাকে।
মাতারবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ছমি উদ্দিন জানান, মাতারবাড়ি থেকে কাকে মনোনয়নের সুপারিশ করা হয়েছে এখনো স্পষ্ট জানিনা। কিন্তু এলাকায় শোনা যাচ্ছে বর্তমান চেয়ারম্যানকে নাকি নৌকা প্রতীকের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। সারাজীবন যারা আওয়ামীলীগের রাজনীতি করে আসছে তাদের বাদ দিয়ে যদি একজন দলের বাইরের লোককে মনোনয়ন দেয়া হয় তাহলে সেটা আওয়ামী পরিবারের সাথে সাধারণ মানুষও কখনোই মেনে নিবেনা। কারণ তিনি একজন জনবিচ্ছিন্ন লোক।