উগ্রবাদীদের হুমকির কারণে ১০ দিন সিলেটের বিয়ানীবাজারের নিজ বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন নাজিমুদ্দিন সামাদ। এমনকি পনেরো দিন নিজের ফেসবুক একাউন্টও বন্ধ (ডিএক্টিভ) রেখেছিলেন। সামাদের বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: তবে পরিস্থিতি কিছুটা ‘স্বাভাবিক’ হয়ে আসলে আবার ঢাকায় ফিরে যান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্র। ফের সচল করেন ফেসবুক একাউন্টও। ফেসবুকে পুনরায় ধর্মান্ধতা ও মৌলবাদবিরোধী লেখালেখি করতেও দেখা যায়।
নাজিমউদ্দিন সামাদের গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার তিলপাড়া ইউনিয়নের মাটিজুরা গ্রামে। বিয়ানীবাজারের প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী ও সেখানকার গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক হাসান শাহরিয়ার বলেন, সামাদকে তাকে বিভিন্ন সময় হুমকি দেওয়া হয়েছিলো বলে শুনেছি।
গত বছরের ৩০ অক্টোবর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দিপনকে হত্যা ও প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলকে হত্যাচেষ্টার পর কিছুটা ভয় পেয়ে যান। এর কিছুদিন পরই তিনি বিয়ানীবাজারে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। সেখানেই কিছুদিন আত্মগোপন করে ছিলেন।
তবে ১০ দিনের মতো বিয়ানীবাজারে অবস্থান করার পর সামাদ আবার ঢাকায় ফিরে যান বলে জানান শাহরিয়ার।
সিলেটের সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা করেন সামাদ। এই স্কুলে তার সহপাঠী ছিলেন সিলেট জেলা সিপিবি নেতা গোলাম রাব্বি চৌধুরী। দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্বও গড়ে উঠেছিলো।
গোলাম রাব্বি চৌধুরী বলেন, সামাদ আমার ছোটবেলার বন্ধু। সে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সবসময়ই সোচ্চার এবং বিভিন্ন প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলো।
রাব্বি বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে সামাদের সাথে আমার শেষ দেখা হয়। এসময় সে তার ফেসবুক একাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছিলো। সিলেট শহীদ মিনারে আমাকে বলেছিলো- ‘কিছুটা চাপে আছি, তাই একাউন্ট ডিএক্টিভ রেখেছি।’
তবে ১৪/১৫ দিন পর সামাদ পুনরায় ফেসবুকে সক্রিয় হয়ে ওঠেন বলে জানান রাব্বি চৌধুরী।
তিন ভাই ইউরোপে থাকেন। তিনি দেশে হুমকিতে আছেন। তবু কেনো সামাদ দেশের বাইরে চলে গেলেন না এমন প্রশ্নের জবাবে বিয়ানীবাজারের গ্রামের বাড়িতে অবস্থানরত সামাদের চাচাতো ভাই বলেন, সে পড়ালেখা করতে চেয়েছে। কিছুতেই পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটুক তা চাইতো না। পরিবারের সব পুরুষ সদস্যরা দেশের বাইরে থাকায় দেশে থাকা বৃদ্ধ মাকেও সে দেখাশোনা করতো। তাছাড়া লেখালেখি বা হুমকির বিষয়ে আমাদের কোনোদিনই কিছু বলেনি।
এদিকে, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বিয়ানীবাজারে আসেনি সামাদের মরদেহ। বৃহস্পতিবার রাতে সামাদের এক ভাই ফ্রান্স থেকে ঢাকা এসে পৌঁছেছেন। শুক্রবার তিনি মরদেহ নিয়ে বিয়ানীবাজার পৌছতে পারেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
৫ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে নাজিম চতুর্থ। বড় ভাই জুলহাস উদ্দিন ও বাবা আব্দুস সামাদ আগেই মারা গেছে। তাঁর বড় ভাই শামীম উদ্দিন ও ছোট ভাই জসিম উদ্দিন থাকেন লন্ডনে। আর মেজোভাই সুনাম উদ্দিন থাকেন ফ্রান্সে। বড় বোন পারুল বেগম বিবাহিত। ছোট বোন ও মা তইরুন্নেছাকে নিয়েই দেশে পরিবার ছিল সামাদের।
গত বুধবার ( ৬ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর সূত্রাপুর এলাকায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের চাপাতি ও গুলিতে নিহত হন নিজামুদ্দিন সামাদ। তাকে হত্যা করার সময় খুনিরা “আল্লাহু আকবর” বলে স্লোগান দেয় বলে এলাকাবাসি জানিয়েছিলেন।