তীব্র দাবদাহে পুড়ছে পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে যে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা এযাবৎকালের রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে। প্রাণঘাতী এ তাপপ্রবাহে ইতিমধ্যে ১৫০ জন মারা গেছে।
থাইল্যান্ডে সাধারণত এপ্রিল মাসে তীব্র গরম পড়ে। গত ৬৫ বছরের মধ্যে দেশটিতে সবচেয়ে দীর্ঘ তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা দেশটির জন্য একটি রেকর্ড। গত ১২ এপ্রিল থাইল্যান্ডের সুখোথাইয়ে তাপমাত্রা ৪৪ দশমিক ৩ ডিগ্রিতে পৌঁছায়, যা দেশটির সর্বকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ডের কাছাকাছি। শুধু থাইল্যান্ড নয়, আশপাশের দেশগুলোতেও এপ্রিল তাপপ্রবাহের দিক থেকে অন্যান্য সব মাসের চেয়ে রেকর্ড করে ফেলেছে।
কম্বোডিয়ার আবহাওয়াবিদ ক্রিস বার্ট বলেন, কম্বোডিয়া ও লাওসে এপ্রিলের তাপমাত্রা এ বছরের অন্য যেকোনো দিনের তুলনায় রেকর্ড গড়েছে।
এপ্রিল মাস আবহাওয়ার দিক দিয়ে ভারতের জন্য নিদারুণ। বৃষ্টিবাদলের দেখা না মেলায় পুরোটা মাস দাবদাহের মধ্য দিয়ে কেটেছে।
চলতি মাসে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ তাপপ্রবাহটি বয়ে যাচ্ছে। ৬ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে দাবদাহ। এপ্রিলে সাধারণত যে গড় তাপমাত্রা থাকে, এখন তাপমাত্রা তার চেয়ে সারা দেশে ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলে সাধারণত এক থেকে দুটি তাপপ্রবাহ বয়ে যায়, যা সর্বসাকল্যে ছয় থেকে সাত দিন স্থায়ী হয়। এর আগে ১৯৯৫ সালে দেশের ১২টি জেলায় ঘুরেফিরে আট দিন দাবদাহ ছিল। এরপর ২০০৭ সালে সাতটি জেলায়, ১৯৯৯ ও ২০০৯ সালে ছয়টি জেলায় পাঁচ থেকে ছয় দিন দাবদাহ বয়ে গেছে। কিন্তু টানা ২৪ দিন দাবদাহ চলতে দেখা যায়নি। এবারের বৈশাখকে গত ৩০ বছরের মধ্যে বিশেষ ব্যতিক্রম হিসেবেই বলছেন আবহাওয়াবিদেরা।
অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ তাসলিমা ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, এল নিনো নামে আবহাওয়ার এক বিশেষ অবস্থার কারণে প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝ বরাবর তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। এর প্রভাবে আফ্রিকা থেকে শুরু হয়ে পূর্ব এশিয়া হয়ে দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত আবহাওয়াগত খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যার প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও পড়েছে।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সৃষ্ট এল নিনোর প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারতে তাপমাত্রা বেড়েছে। গবেষকেরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে। তথ্যসূত্র: ম্যাশেবল, আবহাওয়া অধিদপ্তর।