নোংরা পানি এবং দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর হয়ে উঠেছে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়াস্থ পশ্চিম নতুন বাহারছড়া ও কোনাপাড়া এলাকা। কয়েক বছর ধরে নালা পরিস্কার না করা ও আবর্জনার স্তুুপ সরিয়ে না ফেলায় দুর্ভোগে পড়েছে এসব এলাকার বসবাসকারীরা।
নালা ভরাট হয়ে দুর্গন্ধযুক্ত নোংরা পানি ও আবর্জনা গুলো রাস্তার উপর দিয়ে গেলেও এই বিষয়ে খবর নেই পৌরসভার। খোদ ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমানের কোনো উদ্যোগও চোখে পড়েনি বাসিন্দাদের। ভোটের সময় আশ্বাস দিয়ে গেলেও অধ্যাবধি এসব দুর্ভোগ থেকে এলাকাবাসীকে মুক্ত করেনি বলে অভিযোগ। বরং দিন দিন আরো বেকায়দায় পড়ছে এলাকাবাসী।
এমনকি ভরাট হওয়া নালা সংস্কার ও দুষিত আবর্জনা নিদিষ্ট স্থানে ফেলতে ডাস্টবিনের ব্যবস্থাও নেই এসব এলাকায়। ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানের গাফিলতি ও পৌরসভার সংশ্লিষ্টদের তদারকির অভাবে পশ্চিম নতুন বাহারছড়া ও কোনাপাড়া বাসিন্দারা দুর্গন্ধযুক্ত আবর্জনার উপর ভাসছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগিদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজার পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম নতুন বাহারছড়ার অলিগলিতে নোংরা পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। পানি চলাচলের নালা গুলো আবর্জনায় ভরাট হয়ে আছে। এতে দৈনন্দিন ব্যবহারের পানি গুলো যাচ্ছে মানুষ চলাচলের রাস্তার উপর দিয়ে। অনেক রাস্তা নোংরা পানিতে ডুবে রয়েছে। রাস্তার উপরে ও চারপাশে আবর্জনায় একাকার হয়ে আছে।
অন্যদিকে পুরাতন খাদ্য গুদাম সড়কের কোনাপাড়া এলাকার নালা আরো ভয়াবহ অবস্থা। বছরের পর বছর আবর্জনায় ভরাট হয়ে আছে। পানি চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। শত শত বাড়ির দৈনন্দিনের পানি গুলো চলাচল করতে না পেরে রাস্তার উপর দিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার উপর দিয়ে যাচ্ছে টয়লেটের পানিও। ভয়াবহ দুর্গন্ধে পা ফেলাও যাচ্ছে না কোনাপাড়া এলাকায়।
এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ি সোলতান আহমদ জানান, এই দুর্ভোগ আজকে নয়, পাঁচ বছর আগে থেকেই। পৌরসভার কেউ আজ পর্যন্ত এখানে আসেনি। যার কারণে আবর্জনার কয়েকটি পাহাড় হয়েছে এখানে। আর এই আবর্জনার পাহাড় থেকে নোংরা বাতাস চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। নাক-মুখ চেপে ধরে বছরের পর বছর যাতায়ত করতে হয়।
গৃহিনী রিনা আক্তার জানান, ভোটের সময় প্রার্থীরা দ্বারে দ্বারে এসে আশ্বাস দেয়-এসব আবর্জনা পরিস্কার করা হবে, যাতায়তের সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে, নোংরা পরিবেশ থাকবে না। কিন্তুু এখন নির্বাচনে জয়ের পর আবর্জনা পরিস্কারের উদ্যোগতো দূরের কথা তাদের ছায়াও দেখা যায়না। এই রকম নোংরা পরিবেশ সবার কাছে বিরক্ত হয়ে গেছে।
এলাকার যুবক হাসান তারেক জানান, বার বার বলার পর কয়েক দিন আগে স্থানীয় কাউন্সিলর মিজানুর রহমান ভরাট হওয়া নালা গুলো পরিস্কার ও আবর্জনা সরানোর কথা বলেন। কিন্তু কই, বরাবরের মতো আশ্বাসে সীমাবদ্ধ। প্রতিটি ওয়ার্ড আবর্জনা মুক্ত ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ওয়ার্ড গড়ে উঠতে পারলেও কেন আজ আমাদের নোংরা পানি ও দুর্গন্ধ আবর্জনার উপর বসবাস করতে হচ্ছে।
এবিষয়ে পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান জানান, মাত্র একটি নালার উন্নয়ন হলেও এখনো ২নং ওয়ার্ডে ডাস্টবিন নির্মাণ করা হয়নি। তারপরও আজ কালের মধ্যে যেসব জায়গায় আবর্জনা ও ভরাট নালা রয়েছে তা পরিদর্শন করে পরিস্কারের ব্যবস্থা করা হবে। তবে ইতিমধ্যে পৌরসভার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী বর্ষার আগে পানি চলাচলের সব নাল পরিস্কার করা হবে। তাছাড়া আবর্জনা গুলো সরিয়ে ফেলা হবে।
এই প্রসঙ্গে কক্সবাজার পৌরসভার আবর্জনা অপসারণ ও হস্তান্তর বিষয়ক স্থানীয় কমিটির সভাপতি ও ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ছিদ্দিক লালু জানান, অনেক স্থান পরিদর্শন করে বর্ষার আগে ভরাট নালা সংস্কার ও আবর্জনা গুলো পরিস্কার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে পৌরসভার পক্ষ থেকে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরদেরও এসব বিষয়ে পৌরসভা ও কমিটিদের অবগত করতে হয়।
কক্সবাজার পৌরসভার বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা শামীমা আক্তার জানান, ২ নং ওয়ার্ডে বস্তির আওতায় পড়েছে শুধু টুইট্টার পাড়া এলাকা। ওই এলাকায় টিউবওয়েল, টয়লেট, লাইটিং ও ফুটপাতে ড্রেইনের কাজ করা হলেও ওখানে কোনো ডাস্টবিন স্থাপনা করা হয়নি।
টুইট্টার পাড়া বস্তি উন্নয়ন কমিটির সভাপতি বুলবুল আক্তার জানান, এখানে কোনো ডাস্টবিন নির্মাণ করা হয়নি। যার কারণে অনেকেই আবর্জনা গুলো নালায় ফেলছে। এতে নালা গুলো দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহাবুবুর রহমান জানান, ধারাবাহিকভাবে সব ওয়ার্ডে আবর্জনা অপসারণে কাজ চলছে। তারপরেও ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মাধ্যমে নুনিয়াছড়ার যেসব এলাকায় নালা ভরাট হয়েছে তা সংস্কারের পাশাপাশি আবর্জনা গুলো দ্রুত সরিয়ে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে।