বিথী হক:
ধর্মীয়, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় আইন নিয়ে কিছু বলছি না। সম-অধিকার নিয়ে বলতে গেলে শুধু এক নাগাড়ে বলে গেলেই হয় না। নিজের উপর যে দায়িত্ববোধটা আপনা-আপনি বর্তায় সেটা যত্ন করে নিজের জীবনে প্রয়োগ না করলে নারীদের ইচ্ছাকৃত নেতিবাচক সমালোচনার মুখে ফেলে দেয়া হয়।
“ডিভোর্স” বিষয়ক পোস্টটা পড়ার পর অনেকেই বলেছেন, মেয়েদের কাছে বিয়ে মানে মূলধন ছাড়া ব্যবসা, কাবিন-বাণিজ্য, উপার্জনের উৎস এবং আরো অনেক কিছু। এবং আমি সেই বাণিজ্যের আগুনে ঘি ঢেলে নারীদের আরো কয়েকধাপ এগিয়ে নিচ্ছি।
সুতরাং বাণিজ্যিক দিকগুলো আলোচনা করি-
সবাই জানেন তো কাবিন জিনিসটা আসলে কি এবং কেন?
–“কাবিন মুসলিম বিয়ের একটি অন্যতম অপরিহার্য বিষয়, যা ছাড়া বিয়ে হয় না! কাবিন হলো বর এর পক্ষ থেকে কনেকে দেওয়ার জন্য নির্ধারিত পরিমাণ একটা মূল্য, যা তার ইজ্জতের মূল্য হিসাবে পরিগনিত”।
আচ্ছা, বর কেন কনে’কে টাকা দেবেন? ওহ স্যরি, বলাই তো আছে ইজ্জতের মূল্য। তো ইজ্জত কি পুরুষের নেই? কনেরও তো পুরুষের ইজ্জতের মূল্য নির্ধারণ করে পরিশোধ করা উচিত। কিন্তু কনের তো কখনো পুরুষের ইজ্জতের মূল্য নির্ধারণ করতে হচ্ছে না। মানে নারীরা টাকায় ক্রয়যোগ্য, কিন্তু পুরুষরা নন, তাই তো? এখানে এসেই গালির পরিমাণ বেড়ে যাবে। কারণ কোনো নারী-পুরুষ এখনো পর্যন্ত কাবিন ছাড়া বিয়ের কথা চিন্তাই করতে পারেন না।
আসেন জেনে নিই, কাবিন নারীর কোন কোন জিনিসের উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়। বেশ কিছু অনুমাপকের সাথে কনের মুখশ্রী বিচার করে, কনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং গুণ বিচার করে কাবিনের মূল্যমান নির্ধারিত হয়।
এখন বলেন, কেউ আপনার সুরত দেখে, বংশ দেখে, শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখে আপনার দাম নির্ধারণ করছে বিষয়টা আপনার কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য? আদৌ কি আপনাকে টাকা দিয়ে কেনা যায়? আপনি বিক্রি হবার জন্য সুন্দর, শিক্ষিত?
আপনি যে কারণেই যেমন হোন না কেন, আপনাকে টাকা দিয়ে বিচার করা হচ্ছে আপনার প্রাপ্য কতটা! এটা ভেবে আপনি গর্বিত হন? গর্বিত হন আপনার বিয়ের কাবিন অনেকের চেয়ে বেশি বলে? হওয়াটাই স্বাভাবিক।
সত্যি বলতে আপনি যতই সুন্দর, শিক্ষিত, আধুনিক হন না কেন অতটা শক্ত এখনো হননি যে নিজেকে কারো কাছে বিক্রি হতে দেবেন না। তা নাহলে এখন পর্যন্ত মোহরানার টাকা নিয়ে হাউ-কাউ করতে দেখা যায় কেন আপনাকে? ডিভোর্স হলে পাওনা টাকা বুঝে নিতে আদালতে ছুটতে হয় কেন?
সন্তানের ভরণপোষনের জন্য যদি আলাদা হবার পরও সন্তানের বাবার থেকে টাকা নিতে চান তো আদালত সন্তানের সাবালক হবার পর বাবার কাছে থাকতে নির্দেশ দিলে আমি কোন দোষ দেখি না। যদি নিজের মত বাঁচতে চাওয়ার জন্য কাউকে ছাড়তে চান তো ছেড়েই বাঁচেন, সন্তানকে নিজের কাছে রাখতে চাইলে রাখেন। ঘরবাড়ি, সংসার, সম্পর্ক, মানুষ সব ছাড়বেন, কিন্তু তার টাকা ছাড়তে পারবেন না। তাহলে কী প্রমাণিত হয়? আপনি কি তার কাছে ইজ্জত-সর্বস্ব প্রাণী নন?
ইজ্জতকে শিকায় তুলে ইজ্জতের উপর ধার্য্যকৃত টাকা নিয়ে আর যাই করেন, নিশ্চয়ই আপনি নিজেকে পুরুষের চোখে সম্মানিত বলে দাবি করতে পারেন না। নিজেকে আত্মপ্রত্যয়ী, দৃঢ়চেতা, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নারী দাবি করতে পারেন না।
সবদিক থেকে নিজেকে পুরুষের সমকক্ষ ভাববেন, তার সমান পড়াশোনা করবেন, তার মতো বাইরে কাজ করবেন, তার সঙ্গে রান্না করবেন, শোবেন আর টাকা দেয়ার সময় পুরুষই আপনাকে টাকা দেবে; এটা কোন ধরনের যুক্তি!
সমান মানে সমান; সুবিধাবাদীর সমার্থক শব্দ সমান না এটা মাথায় রাখবেন। সম অধিকার মানে আপনি আর সে সবকিছুতেই সমান, খালি আপনার জরায়ু আর স্তন দিয়ে নিজেকে পণ্য বানিয়ে বিয়ের বাজারে নিজেকে একজনের কাছে বিক্রি করার সময় সম অধিকারের কথা ভুলে গেলে কী করে চলবে? কিংবা আপনি ভুললেও তার তো মনে থাকবে। যতদিন মনে থাকবে ততদিন আপনি ইজ্জত নিয়ে ব্যবসা করবেন।
একজন থেকে বহুজন, বিয়ে করবেন, কাবিন ধরবেন, মূলধন ছাড়া ব্যবসা করবেন এবং সে এটা বললেও দোষ নেই! তার বলার ভাষা তো আপনিই তাকে দিচ্ছেন। কাউকে বলার সুযোগ দেয়া বন্ধ করেন, আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচেন। আপনি নিজেই নিজেকে সম্মান করতে না পারলে, দুনিয়ার মানুষ বাড়ি বয়ে আপনার সম্মান পৌঁছে দিতে আসবেনা। কাজটা খুব কঠিন তাই না?