দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের বিস্ফোরণ ও গুলির ঘটনায় পুলিশসহ চারজন নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ হামলা হয়।
নিহতরা হলেন- কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম, আনসারুল ও পথচারী ঝর্ণা রানী ভৌমিক।
নিহত বাকি ব্যক্তি হামলাকারী বলে দাবি করছে পুলিশ। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তার নামপরিচয় জানাতে পারেনি।
হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। তাদের বেশিরভাগই পুলিশ। আহতদের মধ্যে পুলিশের আট সদস্যকে হেলিকপ্টারে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) আনা হয়েছে। তাদের অবস্থা আশংকাজনক।
এ ছাড়া এ ঘটনায় দু’জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১০টায় শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের নির্ধারিত সময় ছিল। আগে থেকে আজিমুদ্দিন স্কুলের পাশে টহল দিচ্ছিল একদল পুলিশ।
সকাল সোয়া ৯টার দিকে ঈদুল ফিতরের জামাতের আগে ঈদগাহ সংলগ্ন আজিমুদ্দিন স্কুলের পাশে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
এ সময় পুলিশও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে গুলিবর্ষণ করে। বেশ কিছু সময় ধরে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়।
ঘটনাস্থলেই পুলিশ কনস্টেবল জহিরুল হক, পথচারী ঝর্না রানী ভৌমিক ও এক হামলাকারী নিহত হন। তারা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।ঘটনাস্থল থেকে এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ
গুরুতর অবস্থায় আহতদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান পুলিশ সদস্য আনসারুল্লাহ।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সায়েম বলেন, নিহত চারজনের মধ্যে দু’জন পুলিশের কনস্টেবল। অপরজন নারী। বাকিজনের পরিচয় জানা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র বলছে, নিহত ওই ব্যক্তি হামলাকারী হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন।
কিশোরগঞ্জ সদর থানার ওসি মীর মোশাররফ হোসেন বলেন, ঘটনার পর প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
হামলাস্থল থেকে চাপাতি ও বোমাসদৃশ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া গুলিসহ একটি রিভলবার উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, সেখানে চিকিৎসাধীন হামলায় আহত ছয়জন পুলিশকে হেলিকপ্টারে করে সিএমএইচে পাঠানো হয়েছে। তারা স্প্লিন্টারে আহত। তাদের অবস্থা গুরুতর।
এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল থেকেও আহত দুই পুলিশ সদস্যকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকার সিএমএইচে নেয়া হয়েছে। বাকিরা কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ শোলাকিয়া মাঠে যাওয়ার প্রধান রাস্তা স্টেশন রোড, গৌরাঙ্গবাজারের আশপাশের সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। আজিমুদ্দিন স্কুলের চারপাশ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রেখেছে। সেখান থেকে গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে বলে আশপাশের লোকজন জানিয়েছেন।
ঈদের জামাতের আগে শোলাকিয়া ঈদগাহ থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে দুর্বৃত্তরা এ হামলা চালায়। এতে শোলাকিয়া ময়দানে থাকা মুসল্লিদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশের দাবি, পরে অবশ্য নির্বিঘ্নে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এবার ছিল ১৮৯তম ঈদুল ফিতরের জামাত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঈদের নামাজে আসতে হেলিকপ্টার থেকে নামার পরও শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসঊদ ফেরত চলে যান। তার অনুপস্থিতিতে পাঁচ মিনিট পর বড় বাজার জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা সোয়াইব আবদুর রউফ নামাজ পড়ান। ১০ মিনিটের মধ্যে নামাজ-খুতবা ও দোয়া শেষ করেন মাওলানা সোয়াইব। দেশ-বিদেশ থেকে আগত মুসল্লিরা ঈদ জামাতে অংশ নেন। ধারণা করা হচ্ছে, ৩ লক্ষাধিক মুসল্লি এই জামাতে নামাজ আদায় করেন।
পরে মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়, ‘আপনারা কেউ আজিমুদ্দিন স্কুলের দিকে যাবেন না। ওদিকে গোলাগুলি হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, গত ১ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনা ঘটে।
রাতভর জিম্মি ঘটনার পর সকালে কমান্ডো অভিযান চলে। এতে ২০ জিম্মি নিহত হন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই বিদেশী। এই হামলার দায় স্বীকার করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
সেই হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও হামলার ঘটনা ঘটল।