দেড় বছরেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি জেলা ছাত্রদলের কমিটি। চলছে ৭ জনের আংশিক কমিটি দিয়ে। এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ থাকলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। এতেকরে তৃণমুলে দিন দিন বাড়ছে হতাশা ও ক্ষোভ। পাশাপাশি উপেক্ষিত হচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা। সেই সাথে অভিযোগ উঠেছে, জেলা ছাত্রদলের সাত সদস্যের এই আংশিক কমিটির ৫ জনের ছাত্রত্ব নিয়েও।
এদিকে’ ১২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার জেলা ছাত্রদলের এক সভায় কক্সবাজার সিটি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুর রহমান নয়ন ও শহর ছাত্রদলের আহবায়ক মোঃ ইলিয়াছ শীঘ্রই জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার দাবী তুলে। এসময় তাদের যৌক্তিক দাবির সাথে একমত হয়ে কথা বলেন, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল ইসলাম লিটন। আগামী ৩০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা না হলে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
একই সাথে ছাত্রদলের তৃণমূলের ব্যানারে মাঠে নামার হুঁশিয়ারি দেন। ২০১৪ সালের ১ জুলাই জেলা ছাত্রদলের সাত সদস্যের (আংশিক) কমিটি অনুমোদন দেন দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব।
ঘোষিত কমিটিতে রাশেদুল হক রাসেল সভাপতি. সরওয়ার রোমন সিনিয়র সহ-সভাপতি, আবদুর রউফ সহ-সভাপতি, মনির উদ্দিন মনিরকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এছাড়া আলাউদ্দিন রবিন, জাহেদুল ইসলাম লিটন এবং শাহীনুল ইসলাম শাহীন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হন।
ওই সময় কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে এক মাসের মধ্যে ৮১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা এবং সকল সাংগঠনিক ইউনিটের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কেন্দ্রীয় সংসদের নিকট জমা দিতে নতুন কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু দেড় বছরের বেশি সময় ধরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় মাঠ পর্যায়ে দিন দিন হতাশা ও ক্ষোভের দানা বাঁধছে। বিশৃংখলার আশঙ্খা তৈরি হচ্ছে শহীদ জিয়ার হাতে গড়া দেশের সর্ববৃহৎ এই ছাত্র সংগঠনটিতে।
অভিযোগ উঠেছে, জেলা ছাত্রদলের সাতজনের কমিটিতে ৫ জনের ছাত্রত্ব নেই। যে দুইজনের ছাত্রত্ব আছে বলা হচ্ছে তাদের বিষয়েও সন্দিহান অনেকেই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নিজের ছাত্রত্বের বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাশেদুল হক রাসেল নিশ্চিত করলেও বাকীদের বিষয়ে তিনি কোন ধরনের মন্তব্য করেননি।
একটি সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ১২১ সদস্যবিশিষ্ট জেলা ছাত্রদলের একটি কমিটি প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সমন্বয় করছেন। চলতি মাসের মধ্যেই কমিটিটি কেন্দ্রের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
তবে টাকার বিনিময়ে জেলা কমিটিতে স্থান দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতা। তাদের দাবি মতে, পদ দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়া হচ্ছে। অনেকেই দুই হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। টাকার অংক কম হওয়ায় বাদ দেয়া হচ্ছে অনেককে। কিন্তু অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মনির উদ্দিন মনির।
তিনি বলেন, ছাত্রদল কারোর টাকায় চলেনা। নিজেদের টাকা-পয়সা খরচ করে দল পরিচালনা করছি। মাঠে ময়দানে সফর করছি। তৃণমূলে ছাত্রদলকে সুসংঘটিত করতে কাজ করছি। টাকার বিনিময়ে ছাত্রদলের কমিটিতে স্থান পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যারা পদ বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় আছে তারাই এসব অপ-প্রচার চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, শহীদ জিয়ার আদর্শ ও বেগম জিয়ার নির্দেশনায় ছাত্রদল পরিচালিত হয়। দলীয় আদর্শ ও নীতিমালার বাইরে ছাত্রদলে স্থান নেই।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে দেরী হওয়ার কারণ জানতে চাইলে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাশেদুল হক রাসেল বলেন, আওয়ামী দুঃশাসন বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে আমাদের অধিকাংশ সময় পার হয়েছে। ঘরে ঘুমাতে পারেনি কোন নেতাকর্মী। স্বৈরাচারী সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামকালে ঠিক সময়ে অফিসে বসাও সম্ভব হয়নি। এক নেতা আরেক নেতার সাথে ঠিক মতো যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেননি। মিথ্যা ও হয়রানীমূলক মামলায় কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ শীর্ষস্থানীয় নেতারা দীর্ঘদিন কারাবন্দি ছিলেন। যে কারণে নির্ধারিত সময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি।
রাসেলের ভাষ্যমতে, যোগ্যতা সম্পন্ন ও মেধাবীদের নিয়েই জেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই মাসের মধ্যে কমিটি অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, দলের দুঃসময়ে যারা মাঠে ময়দানে তৎপর ছিল তাদের মূল্যায়ন করা হবে।