চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় দেড় হাজার কোটি থেকে বাড়িয়ে ‘একলাফে’ ১৮ হাজার কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২০১০ সালে এক হাজার ৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হলেও বর্তমানে এ প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। সরকারি তহবিলের চার হাজার ৯১৯ কোটি সাত লাখ ছাড়া বাকি টাকার যোগান হবে এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ থেকে। প্রকল্প ব্যয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মেয়াদও। ২০২২ সালের মধ্যে এ রেললাইন নির্মাণ কাজ শেষ করার সময় বেঁধে দিয়েছে একনেক। উন্নয়ন সহযোগি সংস্থা পাওয়া যাওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে বলে একনেক সূত্রে জানা যায়।
পাঁচ বছর আগেই এ রেললাইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও উন্নয়নসহযোগী সংস্থা না পাওয়ায় এতদিন আটকে ছিল। এডিবি অর্থায়নে সম্মতি দেয়ায় প্রকল্পটির ব্যয় একলাফে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হবে। পাশাপাশি রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের পর্যটন সুবিধা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, আলোচিত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য অর্থায়নের লক্ষ্যে ঋণ চুক্তি প্রক্রিয়াকরণের জন্য এডিবির তথ্যানুসন্ধান মিশন ৩১ জানুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করেছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে ঋণ চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া এডিবি ইতোমধ্যেই ঋণ দেয়ার বিষয়টি ইআরডিকে নিশ্চিত করেছে বলেও জানা গেছে।
দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন মিটার গেজ নির্মাণের জন্য এ প্রকল্পটি ২০১০ সালের ৬ জুলাই অনুমোদন দেয় একনেক। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৬৭০ কোটি ৭ লাখ এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে এক হাজার ১৮২ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সেটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু উন্নয়ন সহযোগি না থাকায় প্রকল্পটি আটকে থাকে।
তবে ২০১৪ সালে ৯ সেপ্টেম্বর একনেক বৈঠকে সিঙ্গেল লাইন ট্র্যাককে মিটারগেজের পরিবর্তে ডুয়েলগেজ ট্র্যাকে নির্মাণের নির্দেশনা দেয়া হয়। ওই বছরই প্রধানমন্ত্রী রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় এ প্রকল্পের মাধ্যমে সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ এবং নতুন রেললাইন নির্মাণের সময় ভবিষ্যতে ডাবল লাইন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমির সংস্থান রেখে ভূমি অধিগ্রহণের নির্দেশ দেন। এরপরই মূলত প্রকল্পটি সংশোধন করে পুনরায় অনুমোদনের জন্য একনেক উপস্থাপন করা হচ্ছে
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, “বর্তমানে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম সড়কপথ। কক্সবাজারে যেতে রেল যোগাযোগ নেই। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সে যোগাযোগ স্থাপন হবে। এছাড়া এতদিন উন্নয়ন সহযোগির অপেক্ষায় ছিলাম। এখন আর সে সঙ্কট নেই। তাই প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।”
প্রকল্পটির প্রধান কার্যক্রম হলো- দোহাজারি থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৭৫২ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ।
রেললাইন নির্মাণের জন্য সরকার এক হাজার ৭৪১ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে। পরিকল্পনামন্ত্রী জানিয়েছেন, জমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।