কুমিল্লা সেনানিবাসের একটি অনুষ্ঠানে গান না গাওয়ার অপরাধে কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন পরিবারের সদস্যরা। তনুর মা আনোয়ারা বেগম দাবি করছেন, ‘গান না গাওয়ায় তনুকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর বাসা থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অ্যালবাম নিয়ে যাওয়ার পর আমাদের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হয়। ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করছে ওরা।’
আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সিআইডি কার্যালয়ে ঢোকার আগে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তনুর মা আনোয়ারা বেগম এ কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহি জাহিদের বাসায় আমার মেয়ে টিউশনি করত। ওই সুবাদে তাঁদের সঙ্গে তনুর পরিচয় ছিল। এরপর থেকে সেনানিবাসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও গান গায়। গত ১৭-১৮ মার্চ সেনানিবাসের একটি অনুষ্ঠানে তনুর গান গাওয়ার কথা ছিল। ওই অনুষ্ঠানে তনুকে গান গাওয়ার জন্য তাঁরা অনুরোধ করেন। তনু শ্রীমঙ্গল অন্য একটি অনুষ্ঠানে যাবে, তাই গান গাইতে পারবে না বলে তাঁদের জানিয়ে দেয়। পরে গান না গেয়ে তনু ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সদস্যদের সঙ্গে শ্রীমঙ্গলের চা–বাগান ও লাউয়াছড়া উদ্যানে যায়। সেখান থেকে ফিরে আসার পর ২০ মার্চ বিকেলে টিউশনির কথা বলে তনুকে সালমা আক্তার নামের এক মেয়ের মাধ্যমে ডেকে নেয় সিপাহি জাহিদ। এরপর রাতে মেয়ের লাশ সেনানিবাসের জঙ্গলে পাওয়া যায়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তবাহিনী গণসংযোগ অধিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লে. কর্নেল রাশিদুল হাসান বলেন, ‘খোঁজখবর নিয়ে আমরা এ ব্যাপারে কিছু জানতে পারলে আপনাদের জানাব।’
এত দিন পর কেন এ কথা বলছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘মেয়ে হারিয়ে আমরা পাগলপ্রায়। মেয়েটির সঙ্গে আমার বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক। বাসার যে কক্ষে যাই, সেখানেই তার স্মৃতি। তাই সব কথা সব সময় মনে আসে না। এখন বিচারও পাচ্ছি না, সান্ত্বনাও পাচ্ছি না। তাই মেয়ে হত্যার বিচারের জন্য আল্লাহর দিকে তাকিয়ে আছি।’
তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার মেয়ের শরীরে এত আঘাত ছিল। চুল কেটে নেওয়া হয়েছে। এরপরও মৃত্যুর কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। বাদী হয়ে গত ৫০ দিনেও এ মামলার কোনো কিনারা দেখছি না। যেখানে আমাদের সবার সহযোগিতা পাওয়ার কথা, সেখানে সহযোগিতা নেই, সহমর্মিতাও নেই।’
এদিকে আজ সিআইডি কুমিল্লা দপ্তরে আসেন তনুর বাবা-মা, ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন ও চাচাতো বোন লাইজু জাহান। এরপর সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ও তদন্ত সহায়ক দলের প্রধান আবদুল কাহার আকন্দ ও সিআইডির কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার নাজমুল করিম খান তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।
গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর লাশ ময়নামতি সেনানিবাস এলাকার একটি ঝোপে পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তনুর বাবা ইয়ার হোসেন পরের দিন কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। প্রথমে কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাইফুল ইসলাম এর তদন্ত করেন। পরে তদন্তভার দেওয়া হয় জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মনজুর আলমকে। ১ এপ্রিল তদন্ত দেওয়া হয় সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীমকে। এ ছাড়া তনুর লাশের প্রথম ময়নাতদন্ত হয় ২১ মার্চ। পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশনায় দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হয় ৩০ মার্চ। এরপর ৪ এপ্রিল প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এতে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য না করায় এ নিয়ে নানা মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে। এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি।