গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গত বছর রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের জঙ্গিদের হাতে মুক্তচিন্তার লেখক ওয়াসিকুর রহমান বাবু খুন হন। সন্ত্রাসীরা একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই হত্যার পরিকল্পনা করে। ওই গোপনীয় ওয়েবসাইটটির মাধ্যমে কথা বললে তা সম্পূর্ণ গোপন থাকে। এই মামলার তদন্তে নেমে জিকরুল্লাহ ও আরিফুল নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকার করে যে, অনলাইন ব্যবহার করে খুনের পরিকল্পনা করা হয়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, পরিকল্পনাকারীরা মুক্তচিন্তার বা প্রগতিশীল লেখকদের খুনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টার্গেট ঠিক করে। যারা সাইবার অপরাধ সংঘটিত করছে তারা প্রত্যেকেই ‘সাইবার এক্সপার্ট’। সাইবার ক্রাইমের ব্যাপারে তারা অনেক দক্ষ। তারা ইন্টারনেটের এমন সব লিংক ব্যবহার করে যার নামই অনেকে জানে না। এই ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহারকারীদের আলাপচারিতা এমনভাবে গোপন রাখে যে পুলিশ তো দূরের কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও তা টের পায় না। ব্যবহারকারীদের আলাপচারিতা পুরোপুরি পাসওয়ার্ড প্রোটেক্টেড থাকে। তদন্তে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ‘প্রোটেক্টেড টেক্সট’ নামে একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ওয়াসিকুর রহমান বাবুকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতারা এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করত। ওয়াসিকুরকে খুনের পরিকল্পনার জন্যই ওই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়। হত্যাকা-ের পরপরই ওই ওয়েবসাইটটি তারা বন্ধ করে দেয়। পাসওয়ার্ড প্রোটেক্টেড থাকার কারণে গোয়েন্দারাও এই পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছুই জানতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে অন্যান্য মুক্তচিন্তার লেখকদের খুনের পরিকল্পনাও একইভাবে করা হয়েছে।
ঝামেলামুক্ত কেনাকাটার জন্য অনেকেই এখন অনলাইনের ওপর নির্ভর করেন। প্রথমদিকে অনলাইনে কেনাকাটা নিরাপদ ছিল। কিন্তু এখানেও সাইবার ক্রাইম হানা দিয়েছে। চলছে প্রতারণা। প্রতারকরা অনলাইন শপিং সাইটগুলোকে কেন্দ্র করে প্রতারণার নতুন ফাঁদ পেতেছে। প্রতারণার মাধ্যমে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন দামি জিনিসপত্র হাতিয়ে নিচ্ছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার সাইবার প্রতারণার অভিযোগে এক নারীসহ ৩ জনকে র্যাব গ্রেপ্তার করে। আফসানা, রানা রায়হান ও তানভির হোসেন নামের ওই প্রতারকরা জানায়, ওয়েবসাইটে ল্যাপটপ, ম্যাকবুক, নোটবুক বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখে তা ক্রয়ের জন্য যোগাযোগ করে। যোগাযোগের সময় তারা ভুয়া আইডি ব্যবহার করে। এই আইডির মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করার পর নির্দিষ্ট দিনে একটি স্থানে বিক্রেতাকে মালামাল নিয়ে আসতে বলে। স্থান হিসেবে তারা বেশির ভাগ সময় শপিংমল বা মার্কেট ব্যবহার করে। মালামাল হাতে নেয়ার পর মূল্য না দিয়েই প্রতারকরা কৌশলে কেটে পড়ে। পরবর্তীতে অনলাইনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ওই আইডিতে তাদের পাওয়া যায় না।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, অনেক ছেলেমেয়ে সাইবার সুবিধা ব্যবহারের মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদে পড়ে সর্বনাশ হয়েছে। নারী ও পুরুষ উভয়েই এ ধরনের প্রতারণা করে আসছে। এখানেও প্রতারকরা ভুয়া আইডি ব্যবহার করে। প্রতারিত হওয়া মেয়েরা অভিযোগ নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাবের শরণাপন্ন হয়। তবে গ্রেপ্তার হয়েছে এমন প্রতারকের সংখ্যা খুবই কম। বেশির ভাগেরই আইডি শনাক্ত করা সম্ভব না হওয়ায় তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে প্রতারণার ভিডিও ফুটেজ ও অন্যান্য ডকুমেন্ট উদ্ধার করা হয়েছে। সাইবার অপরাধে মামলা হয়েছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, সাইবার অপরাধ দমনে পর্যাপ্ত লজিস্টিক সাপোর্ট এখন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক সময় এ ধরনের অপরাধ দমনে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু এর পরও গোয়েন্দারা তাদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিশ্বের উন্নত দেশে এ ধরনের অপরাধ দমনে পুলিশকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে পুলিশে এ ধরনের সুযোগ খুবই কম। এর পরও পুলিশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাইবার অপরাধের রহস্য উদঘাটন ও অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।