দীর্ঘসময় ক্ষমতার বাইরে কাটানো বিএনপির নতুন বছরে নিজেদের সাংগঠনিক কাজেই মনোযোগী হতে আগ্রহী। বড় ধরনের ‘পরিবর্তন বা পরিবেশের’ উদ্ভব না ঘটলে আপাতত অসমাপ্ত সাংগঠনিক কাজগুলো শেষ করার পক্ষে দলটির নীতিনির্ধারকরা। সাংগঠনিক কাজের পরই একটি জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে আন্দোলনে যেতে চায় বিএনপি। যদিও এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দলীয় কোনও আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই দলের স্থায়ী কমিটি, সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বসে এ বছরের দলীয় রাজনৈতিক রোডম্যাপ নির্ধারণ করবেন খালেদা জিয়া।
শুক্রবার রাজধানীতে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আসা কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে আলাপকরে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান মনে করেন, এই মুহূর্তে আন্দোলনের পরিবেশ বা সুযোগ কোনওটিই বিএনপির নেই। ফলে, বিএনপিকে সাংগঠনিক কাজ গুছিয়ে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে জনগণের কাছাকাছি যাওয়াই তার কাছে প্রথম বলে বিবেচ্য।
আহমেদ আযম খান বলেন, শুক্রবার ম্যাডাম খালেদা জিয়ার বক্তব্যে পরিষ্কার যে, তিনি দল গোছানো, সাংগঠনিকভাবে বিএনপিকে শক্তিশালী করার পক্ষে। এ কারণে নতুন বছরে বিএনপির রোডম্যাপ অনেকটাই পরিষ্কার।
শুক্রবার ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আলোচনায় এসে খালেদা জিয়া বলেছেন, ছাত্রদলসহ বিএনপির সবগুলো অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে গোছানো হবে। তিনি কয়েকজন নেতার নাম নিয়ে বলেছেন, তাদেরকে কেন এবং দলের কোন পজিশনে তাদের দরকার।
বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, এই ধরনের বক্তব্য বিএনপির চেয়ারপারসন এই প্রথম দিয়েছেন। এমন মন্তব্য ছিল বক্তব্য শোনার সময় ছাত্রদলের সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের।
জানা গেছে, গত বছরের শেষ দিকে শুরু হওয়ায় বিএনপির সাংগঠনিক তৎপরতা পৌর নির্বাচনের কারণে থমকে ছিল। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করার চিন্তা-ভাবনা আছে-এমন কথা শোনা গেলেও বাস্তবে তা ঘটেনি। পরবর্তীতে পৌরসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণের কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রম গুটিয়ে আনে বিএনপি।
বিএনপির কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বিগত বছরে শুরু হওয়া সাংগঠনিক কার্যক্রম খুব দ্রুত শুরু হবে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই নেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করবেন খালেদা জিয়া। পাশাপাশি নতুন বছরে বিএনপির রাজনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাও করবেন তিনি।
এ ব্যাপারে তার উপদেষ্টা ও কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নতুন বছরের পরিকল্পনা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। ম্যাডাম হয়তো দ্রুতই বসবেন এ নিয়ে। এরপরই বছরের প্ল্যান নিয়ে জানা যাবে।
বিএনপির আরেকটি সূত্র জানায়, এ বছরে বিএনপি সাংগঠনিক কার্যক্রম গোছালেও পরবর্তী বছরে নির্বাচনের লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ের আন্দোলন ও প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানোর চেষ্টা চলবে।
সূত্রমতে, এ মাসের শেষ দিবে বা আগামী মাসের প্রথম দিকে ভারত সফরে যেতে পারেন খালেদা জিয়া। এ সফরেই হয়তো পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ভারত সরকারের মনোভাবের পরিবর্তন বা অপরিবর্তন-দুটোই বিচার-বিশ্লেষণ করবে বিএনপি।
শুক্রবার ছাত্রসমাবেশে খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশে বিনিয়োগ কমে গেছে। সুযোগ সুবিধা কম, চাঁদাবাজি ও পরিবেশের সংকটের কারণেই বিদেশিরা বিনিয়োগে বাংলাদেশ থেকে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
খালেদা জিয়া এও বলেন, তার দল ক্ষমতায় আসলে বিদেশিদের বিনিয়োগের জন্য সব রকমের সুযোগ-সুবিধা তিনি করবেন। তার মতে, বিদেশিরা বিনিয়োগ করলে দেশে কর্মসংস্থান বাড়ে। এতে করে সবাই রাজনীতি করতে পারে না, তারা চাকরী পায় বলেও তিনি বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
খালেদা জিয়ার আরেক উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী দলীয় নেতার ভারত সফর সম্পর্কে কোনও তথ্য জানেন না বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান। তিনি বলেন, এ নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানি না।
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, বিগত বছরের ৫ জানুয়ারি সরকারপতনের লক্ষ্যে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি দিলেও এবার ওই পথে হাঁটছে না দলটির নীতিনির্ধারকরা। এ বছর ওই দিনে একটি সমাবেশ করার চিন্তা করছে বিএনপি। ইতোমধ্যে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন করা হয়েছে। শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সমাবেশের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছে। ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, সমাবেশ করতে না দিলেও নিদেনপক্ষে মানববন্ধন বা মৌন মিছিল অন্তত করা উচিৎ।
এর আগে গত পৌরসভা নির্বাচনের দিবাগত রাতে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকেও এই মুহূর্তে কর্মসূচির পথে না হাঁটার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে খালেদা জিয়া। অনেক নেতা জোট পুনর্গঠনের প্রস্তাব করেছেন।
বিএনপির সূত্র বলছে, দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরই হয়তো ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করবেন খালেদা জিয়া। ওই বৈঠকে শরিকদলগুলোকে দলীয় শক্তিবৃদ্ধি, সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরুর পরামর্শ দিতে পারেন তিনি।