মঙ্গলের আবাহন আর অমঙ্গলের আঁধার ঘোচানোর প্রত্যয়ে শেষ হলো মঙ্গল শোভাযাত্রা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়ে রূপসী বাংলা হোটেলের সামনের সড়ক ঘুরে টিএসসি হয়ে আবার চারুকলার সামনে এসে শেষ হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রায় সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নানা অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বানের মধ্য দিয়ে বাংলা নতুন বর্ষকে বরণ করল নগরবাসী।
‘অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে…’-কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা এই গানের লাইনটি ছিল এবার শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য। সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদই এবারের শোভাযাত্রায় মূল থিম। বাংলা ১৪২৩ সালকে বরণ করে নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রতিবছরই এই শোভাযাত্রার আয়োজন করে থাকে।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় নানা রঙের মুখোশ। ছবি: জাহিদুল করিমমঙ্গল শোভাযাত্রায় মাটির পুতুল, পাখি, হরিণ। ছবি: জাহিদুল করিমনানা রঙে রঙিন শোভাযাত্রা। ছবি: জাহিদুল করিমনারী, পুরুষ, শিশু সবার অংশগ্রহণে মঙ্গল শোভাযাত্রা। ছবি: জাহিদুল করিমমুখোশ, প্রতিকৃতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। ছবি: জাহিদুল করিমশোভাযাত্রায় মানুষের ঢল। ছবি: জাহিদুল করিমএগিয়ে যাচ্ছে শোভাযাত্রা।
শোভাযাত্রায় মা-শিশুর অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হয়। এ ছাড়া হাতি, মাছ, টেপা পুতুলসহ নানা ধরনের প্রতিকৃত ছিল মঙ্গল শোভাযাত্রায়। সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে ময়ূরপঙ্খী নৌকা যেমন ছিল, তেমনি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের থাবা বোঝাতে ছিল একরোখা ষাঁড়ের অবয়ব। শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া হাজারো মানুষের কারও হাতে মুখোশ, বাঁশি, ঢোল ও বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র ছিল। নেচে-গেয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছে অনেককেই। পোশাকে লাল ও সাদার আধিক্য বেশি চোখে পড়ে। মঙ্গল শোভাযাত্রা পুলিশের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে হয়েছে। শোভাযাত্রার সামনে-পেছনে এবং ভেতরে সাদাপোশাকে পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময় সড়কের পাশে পোশাকধারী পুলিশের সংখ্যাও ছিল অনেক।
মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, প্রতিটি বছর আমাদের সামনে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসে। অতীতের ভুলভ্রান্তি দূর করে এবার সামনের দিকে নতুন করে চলতে হবে।
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, এ বছরের শোভাযাত্রা ঘিরে মূল ভাবনা ছিল সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। এখন মায়ের হাতে সন্তান, সন্তানের হাতে মা খুন হচ্ছে। ধর্ম ব্যবসায়ীরা নানাভাবে সমাজকে কলুষিত করছে। এ থেকে মানুষ মুক্তি চায়।
শোভাযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও নগরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।