বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের পদ শূন্য থাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রম দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। থমকে আছে উন্নয়ন কর্মকান্ড। কার্যক্রমের উপর একেবারেই তালা ঝুলানো। পরিষদে গিয়ে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন এলাকার জনসাধারন। আর এদিকে পাসপোর্ট তৈরী, জাতীয়তা সনদ, জম্ম নিবন্ধন সনদসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা নিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার পাহাড়ী-বাঙ্গালী জনসাধারণ।
জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ আবু সৈয়দ গত ২১ ফেব্রুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। এর আগে গত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ৬ আগস্ট ২০১৪ পরিষদের সদস্যদের উপস্থিতিতে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৩ নং ধারা মোতাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচন আয়োজন করেন। এতে মো. ফরিদুল আলম ও আলী হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৫ ভোট পেয়ে ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার ফরিদুল আলম প্যানেল চেয়ারম্যান-১ নির্বাচিত হন।
এর পর নির্বাচিত চেয়ারম্যান আলহাজ আবু সৈয়দ হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে ৪০ দিনের ছুটিতে গেলে প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে মো. ফরিদুল আলম ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ থেকে ৪০ দিন পর্য ন্ত পরিষদের দায়িত্ব পালন করেন। এ সংক্রান্ত পরিষদের ০৪৫/২০ (৬)/২০১৪ একটি পত্র বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বরাবরে প্রেরণ করেছিলেন নির্বাচিত চেয়ারম্যান আলহাজ আবু সৈয়দ।
কিন্তু সম্প্রতি নির্বাচিত চেয়ারম্যান আলহাজ আবু সৈয়দের মৃত্যুর পর ইউনিয়ন পরিষদ আইন ও গঠিত প্যানেল চেয়ারম্যান-১ দায়িত্ব নেওয়ার কথা থাকলেও ইউপি সচিবের বাধার কারণে তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করতে পারেননি।
এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্বাচিত চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পর শূন্য পদে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত পূর্বে ঘোষিত প্যানেল চেয়ারম্যান বাতিল করে পুনরায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাচনের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে গত ২৪/০২/২০১৬ একটি আবেদন করেন ৯ জন ইউপি সদস্য।এর পর থেকেই শুরু হয় জনগণের ভোগান্তি।
অভিভাবকহীন ইউনিয়নে নাগরিক সুবিধা নিতে যাওয়া চাকঢালা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা শামসুল আলম, ফরিদ আহামদ, ছৈয়দ কাশেমসহ অনেক ভোক্তভূগিরা এ প্রতিবেদককে জানান- ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান না থাকায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। অনেক জনসাধারন জরুরী চেয়ারম্যান সনদ, পাসপোর্ট ফরমে স্বাক্ষরসহ ইত্যাদি কাজে একজন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। উন্নয়ন কর্মকান্ড ব্যঘাত হচ্ছে বলে জানান। তারা বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড এগিয়ে নিতে প্যানেল চেয়ারম্যানের মাধ্যমে নাগরিক সুবিধা প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাঁর দপ্তরের ০০.০০.০৩৭৩.১০১.০৫.০০১.২০১৬-১০২ স্মারকে জেলা প্রশাসক বরাবরে মতামত জানিয়ে একটি পত্র লিখেছেন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে- স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) অধ্যাদেশ ১৯৮৩ অনুযায়ী চেয়ারম্যানে মৃত্যুবরণ করায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য-সদস্যাগণের আবেদনের ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অথবা প্যানেল চেয়ারম্যান নিয়োগের কোন বিধান না থাকায় ১নং নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের বিরাজমান বিষয়টি নিয়ে নির্দেশনার কথা উল্লেখ করা হয়। পত্রে উল্লেখিত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এএসএম শাহেদুল ইসলাম।
এ বিষয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ মো. ফরিদুল আলম বলেন- ‘স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন অনুযায়ী আমাকে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। ইতিপূর্বে আমি ৪০দিন চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছি’।
কিন্তু সম্প্রতি নির্বাচিত চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পর ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের অসহযোগিতার কারনে তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারছেনা বলে জানান। উল্লেখ্যঃ নির্বাচিত চেয়ারম্যান আবু ছৈয়দ থাকাকালীন ৩টি প্যানেল চেয়ারম্যন ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচিত করেন।