ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূল পর্যায়ে সহিংসতার ঘটনা বেড়েই চলছে। সোমবার বগুড়ার শিবগঞ্জে একজন নিহত হয়েছেন। দেশের অন্য সাত জেলায় নির্বাচনী সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৬৫ জন। বুধবার বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ভাসানচর ইউনিয়নে নির্বাচনী সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন অন্তত আরো পাঁচজন। এ নিয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় সাতজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটল। প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে ২২ মার্চ। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের নির্বাচন।
নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা বাংলাদেশে নতুন কোনো ঘটনা নয়। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পেশিশক্তির ব্যবহার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বেশি ঘটে থাকে। কারণ এই নির্বাচনে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়টিও প্রাধান্য পায়। এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা আগের চেয়ে বেশি ঘটতে পারে এমন আশঙ্কার কথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে আগেই জানানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। সংঘর্ষপ্রবণ কেন্দ্র বা এলাকার তালিকা দেখে নির্বাচন কমিশন আগাম ব্যবস্থা নিলে নির্বাচনী সংঘর্ষ অনেকাংশে এড়ানো যায়। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকলেও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকে অনেক সংস্থা। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। ভোটগ্রহণের দিন কোথাও সহিংসতার ঘটনা ঘটলে প্রয়োজনে গুলির নির্দেশ দেওয়া হয় এবং অনেক বাহিনী মোতায়েন করা হয়। ফলে ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ হয়। কিন্তু ভোটের আগে যে সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে, নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসন কিভাবে এর দায় এড়াবে?
প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। সংঘর্ষপ্রবণ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল ২০০৩ সালে। সেবার ইউপি নির্বাচনের সময় ৮০টিরও বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সে তুলনায় এবার প্রাণহানির ঘটনা অনেক কম। কিন্তু একটি প্রাণহানির ঘটনাও তো দুঃখজনক। কাজেই নির্বাচন কমিশনকে এ ব্যাপারে আরো সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। নির্বাচনের সময় কমিশন সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। স্থানীয় প্রশাসনও কমিশনের নির্দেশে পরিচালিত হওয়ার কথা। কাজেই নির্বাচন কমিশন কার্যকর ব্যবস্থা নিলে সংঘাত-সংঘর্ষ অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব। বিশেষ করে তালিকাভুক্ত সংঘাতপ্রবণ এলাকা ও কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা আরো জোরদার করা উচিত। আমরা দেখতে চাই নির্বাচন কমিশন তার ক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহার করছে। নির্বাচন সামনে রেখে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা এড়ানো হয়তো পুরোপুরি সম্ভব হবে না। কিন্তু প্রাণহানির ঘটনা আমরা দেখতে চাই না। আমরা চাই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল আচরণ।