উখিয়ার বিভিন্ন স’ানে প্রবহমান খাল, ছরা ও নালার পানিতে মাছচাষ করার জন্য অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণের ফলে পানিপ্রবাহ বন্ধ থাকায় চলতি মৌসুমে মারাত্মক সেচ সংকটে পড়ে শত শত একর জমিতে বোরো চাষাবাদ হচ্ছে না। স’ানীয় কতিপয় প্রভাবশালীচক্র বনকর্মীদের ম্যানেজ করে যত্রতত্র বাঁধ নির্মাণের ফলে পানি নিষ্কাশন বাধাপ্রাপ্ত হয়ে জলাবদ্ধতায় আমন চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি স’ানীয় কৃষকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে অপরিকল্পিত বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখার ফলে বোরো মৌসুমে চাষাবাদের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাবার ড্যামগুলো অকেজো হয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এলাকার বৃহত্তর কৃষক সমাজ উক্ত অবৈধ বাঁধগুলো অপসারণ করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস’া গ্রহণের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
স’ানীয় চাষিদের অভিযোগ ও সরেজমিন এলাকা ঘুরে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হলদিয়াপালং ইউনিয়নের বড়বিল, ফাত্রাঝিরি, জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি, মনখালী, রত্নাপালং ইউনিয়নের ডেইলপাড়া, রাজাপালং ইউনিয়নের মধুরছড়া, পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী খালসহ বেশ কয়েকটি স’ানে এলাকার কতিপয় অসাধুচক্র পাহাড় কেটে বাঁধ দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করছে। গ্রামবাসীর অভিযোগ, অবৈধ বাঁধ নির্মাণের ফলে পানি প্রবাহ বন্ধ রয়েছে। যার ফলে শত শত একর জমিতে সেচ সংকটের কারণে বোরো চাষাবাদ, পানের বরজসহ বিভিন্ন কৃষিজ পণ্য উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একইভাবে বাঁধের কারণে পানি নিষ্কাশন বাধাপ্রাপ্ত হয়ে গ্রামের পর গ্রাম জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে আমন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বন্যায় কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে কৃষকদের অপূরণীয় ক্ষতির মুখাপেক্ষী হতে হচ্ছে। পালংখালী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এমএ মনজুর জানান, পালংখালী খালটি বেদখল হয়ে পড়ার কারণে অর্থকরী ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ খালটি দখলমুক্ত করার জন প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হলেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি বলে স’ানীয়দের অভিযোগ। দোছরী গ্রামের কৃষক ছৈয়দ হামজাসহ বেশ কয়েকজন অভিযোগে জানান, থাইংখালী থেকে তেলখোলা বরকাটা হয়ে এ খালটি মাছকারিয়া, মধুরছড়া হয়ে দোছরী হরিণমারা থেকে রেজু খালের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। বরকাটা খালের ওপর পর পর ৩টি বাঁধ নির্মাণ করে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছচাষ করছে স’ানীয় একটি প্রভাবশালীমহল। স’্ায়ী বাঁধ নির্মাণের কারণে চলতি মৌসুমে বোরোসহ কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়ে কৃষকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস’ হচ্ছে। ভুক্তভোগী গ্রামবাসী আরো জানান , বর্ষাকালে বাঁধের কারণে পানি প্রবাহ বন্ধ থাকায় তেলখোলা মোছারখোলাসহ বরকাটা এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়ে পড়ে। সমপ্রতি বরকাটা খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শিরোনাম সংবাদ প্রকাশের জের ধরে থাইংখালীর বনকর্মীরা অভিযান চালিয়ে উক্ত বাঁধটি অপসারণ করে অভিযুক্ত পিতাপুত্র ও প্রবাসীসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তেলখোলা গ্রামে মোহাম্মদ আলীর ছেলে সোনা আলী ও তার ছেলে মদন আলীসহ ৪০ সদস্যের একদল ভূমিদস্যু বনভূমির পাহাড় কেটে বরকাটা ছরায় মাছ চাষের জন্য বাঁধ নির্মাণ করায় শুষ্ক মৌসুমে প্রচণ্ড খরা ও বর্ষায় বন্যার প্রাদুর্ভাবে হাজার হাজার কৃষক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছে।
থাইংখালী বনবিট কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, বরকাটা ছরায় নির্মিত বাঁধটি অপসারণ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ফের যদি ওই বাঁধটি নির্মাণ করে তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস’া নেয়া হবে। উপজেলা সহকারি প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন জানান, উপজেলার বিভিন্ন স’ানে খাল, ছরা, নালা বন্ধ করে অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণের ফলে পানিপ্রবাহ বন্ধ থাকায় রাবার ড্যামে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিয়ে আশংকায় রয়েছে রাবার ড্যাম সংশ্লিষ্ট কৃষকেরা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাঈন উদ্দিন জানান, পরিবেশ ও চাষাবাদের ক্ষতি হয়, এমন কোনো কর্মকাণ্ড করলে তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে মামলাসহ নগদ অর্থ জরিমানা করার জন্য প্রশাসন তৎপর রয়েছে।