বোরো চাষের সময় এটা। এতে সেচ লাগে অনেক বেশি। বৃষ্টি বাদ দিয়ে আবাদ। ব্যয় বরাদ্দ বাড়িয়েও লাভ হচ্ছে না। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, পাবনা, রাজশাহীতে। নওগাঁ জেলাতেও পানি নাগালের বাইরে। ১২ মিটার মাটি খুঁড়েও মিলছে না পানি।
তিস্তা সেচ প্রকল্প প্রায় অচল। ভারতের জলপাইগুড়ির গাজলডোবা ব্যারেজে তিস্তা আটকে না থাকলে এ অবস্থা হতো না। ১৯৯৬ সালের গঙ্গা চুক্তিতে যেটুকু সুরাহা হয়েছিল, তিস্তা পরিস্থিতি যেন সেটা ‘উসুল’ করে নিচ্ছে।
হেক্টর প্রতি সেচের খরচ ১২ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। গত বছরেও এত ব্যয় ভাবা যেত না। ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের হিসেবে আগামী ১০ বছরে এটা দ্বিগুণ হবে। চাষীরা এখন যাবেন কোথায়? কষ্ট করে ফসল ফলিয়েও দাম পাবেন না। বাংলাদেশের জমি উর্বর এটা ঠিকই, তাই বলে তো পানি ছাড়া চাষ হয় না!
বিশ্ব ব্যাংকের সেচ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সেচ কমিয়ে চাষ করা দরকার। চীনে এক কেজি ধান উৎপাদনে পানি লাগে এক হাজার লিটার। সেখানে বাংলাদেশের প্রয়োজন চার হাজার লিটার। এটা হচ্ছে ঠিকঠাক ব্যবহারের অভাবে।
কৃষিতে বিজ্ঞান প্রযুক্তিকে বেশি করে কাজে লাগাতে হবে। যথার্থ পানি প্রকল্পের অভাবেই পানি নষ্ট হচ্ছে। বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে না পারলে পানির অভাব কাটবে না। পাশাপাশি পানির অপচয় বন্ধ করাটাও জরুরি।
ইউনিসেফ জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে বিশ্বে। বিশেষ করে খরা আর বন্যা প্রবণ এলাকায় তীব্র পানি সংকট দেখা দেবে। বিপদ বৃত্তের বাইরে নয় বাংলাদেশ। সেচ সমস্যার অন্যতম কারণ এটাই।
বোরো মওসুমে জমি শুকিয়ে যেন মরুভূমি। চার লাখ অগভীর নলকূপ বসে গেছে। ৪৮ জেলার ২১৩ উপজেলায় পানির জন্য হাহাকার। যে ১৭ লাখ শ্যালো টিউবওয়েল এখন টিকে আছে, তাদের অবস্থাও সঙ্গীন। ২৪ ফুট নীচেও পানি মিলছে না। পানির সন্ধানে খরচ বাড়ছে।
বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদনের ৬২ শতাংশ ব্যয় হয় সেচে। এবার সেটা আরও বাড়বে। পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাবে বিদ্যুৎ আর ডিজেলের খরচ। বিশ্বে সেচের খরচে শীর্ষে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় স্থানে থাইল্যাণ্ড। তাদের বরাদ্দ উৎপাদনের ২৬ শতাংশ। তিন নম্বরে থাকা ভিয়েতনামে কিন্তু সেচের খরচ অনেক কম। মোট কৃষি উৎপাদন খরচের মাত্র ১৩ শতাংশ।
বিঘেতে ২০০ কেজি ধান ফলাতে যদি সব টাকা সেচের পানিতে যায়, তাহলে থাকলটা কী। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে চাষের তো কোনো মানেই হয় না। বোরো চাষে আর ভরসা পাচ্ছে না কৃষকরা। তবু চাষ চালাতে হবে। চার ফসলি উর্বর জমি কি ফেলে রাখা যায়! শুধু আমন চাষে চলবে না। কৃষি নির্ভর দেশে উৎপাদন বাড়াতে সারা বছরই চাষ।
আমনের সময় বৃষ্টি নামে, বোরোতে সে সম্ভাবনা কম। কালবৈশাখীতে কিছুটা স্বস্তি মিললেও সেটা চাষের জন্য যথেষ্ট নয়। তাও যেটুকু পাওয়া যায় তাই লাভ। এখন আকাশে এক টুকরো মেঘ দেখা দিলেও অনেক।