শক্তিশালী ভারতের ব্যাটিং লাইনআপকে আটকাতে পারলো না বাংলাদেশ। বিরাট কোহলি ও শিখর ধাওয়ানের ব্যাটে স্বাগতিকদের সহজেই ৮ উইকেটে হারিয়ে ষষ্ঠবারের মতো এশিয়া কাপ জিতে নিয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। সাব্বির রহমানের প্রতিরোধের পর মাহমুদউল্লাহর ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৫ উইকেট হারিয়ে ১২০ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। সাত বল বাকি থাকতেই ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত।
প্রথম চার ওভারে ১৯ রান দিয়ে ভারতকে চাপেই রেখেছিল আল-আমিন আর তাসকিন আহমেদ। আল আমিনের প্রথম ওভারেই স্লিপে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রোহিত শর্মা। টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো খেলতে নামা তরুণ পেসার আবু হায়দার রনির করা পঞ্চম ওভারে ১৪ রান নিয়ে চাপটা ঝেড়ে ফেলেন বিরাট কোহলি ও শিখর ধাওয়ান।
দলের একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনার সাকিব আল হাসান পরের ওভারে দেন ১৫ রান। একাদশ ওভারে আবার ফেরা সাকিবের প্রথম দুই বলে দুই চার মেরে ফিফটি তুলে নেন ধাওয়ান।
নিজের প্রথম দুই ওভারে মাত্র সাত রান দেওয়া নাসির হোসেন তৃতীয় ওভারে আর কোহলি-ধাওয়ানকে আটকে রাখতে পারেননি। ওই ওভারে ১৫ রান নিয়ে আস্কিং রান রেটটাকে বাগে নিয়ে আসেন তারা।
তাসকিনের বলে সৌম্য সরকারের দুর্দান্ত ক্যাচে আউট হয়ে ফেরার সময় ৪৪ বলে নয় চার আর এক ছক্কায় ৬০ রান তোলেন ধাওয়ান। তবে মহেন্দ্র সিং ধোনি নেমেই খেলা শেষ করে দেন। আল আমিনের করা চতুর্দশ ওভারে দুই ছক্কা আর এক চারে ভারতকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান ভারত অধিনায়ক (৬ বলে ২০)। ২৮ বলে ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন কোহলি।
রোববার সন্ধ্যায় প্রবল বৃষ্টির পর দেরিতে শুরু হওয়া এশিয়া কাপের ফাইনালে টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠাতে বেশি ভাবতে হয়নি ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। ১৫ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে শুরুর দিকে উইকেট পড়ার পাশাপাশি নিয়মিত চার-ছয় মারতে না পারার ব্যর্থতায় স্বাগতিকদের একশ’ পেরোনোই কঠিন হয়ে পড়েছিল। তবে সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ১৩ বলে অপরাজিত ৩৩ রান করে বাংলাদেশের বোলারদের লড়াই করার মতো সংগ্রহ এনে দেন দারুণ ফর্মে থাকা মাহমুদউল্লাহ। দুই জনের ৪৫ রানের জুটি জমে ওঠে মাত্র ২০ বলে। এ নিয়ে টুর্নামেন্টে টানা চার ম্যাচে অপরাজিত থাকলেন ফিনিশারের নতুন ভূমিকা নেওয়া মাহমুদুল্লাহ। মাহমুদুল্লাহকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন সাব্বির রহমান। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের ইনিংসটাকে ধরে রাখেন ২৯ বলে ৩২ রান করা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
সর্তক শুরুর পর আশিস নেহরার পর পর দুই বল বাউন্ডারি পার করে তৃতীয় চার মারতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন সৌম্য সরকার (৯ বলে ১৪)। পরের ওভারেই জাসপ্রিত বুমরাহর বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান আরেক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল (১৭ বলে ১৩)। পাওয়ার প্লের ৫ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তুলতে পারে ৩০ রান। দ্রুত ২ উইকেট হারানোর পর প্রতিরোধ গড়ে ওঠে সাকিব আল হাসান আর সাব্বির রহমানের ৩৪ রানের জুটিতে। অশ্বিনের বলে স্লগ সুইপ করতে দিয়ে শর্ট লেগে বুমরাহর হাতে ধরা পড়েন সাকিব (১৬ বলে ২১)। ব্যাটে বলে সংযোগ হচ্ছিল না মুশফিকুর রহিমের। বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতেও পারেনি। দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রান আউট হন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক। শেষ মুহূর্তে ডাইভ দিলেও ব্যাট উঁচিয়ে থাকায় ফিরতে হয় তাকে। জাদেজার পরের বলেই ডিপ মিডউইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বিরাট কোহলিকে ক্যাচ দেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। এরপরই শুরু মাহমুদুল্লাহ আর সাব্বিরের পাল্টা আক্রমণ।
দুই চারে নেহরার ত্রয়োদশ ওভারে আসে ১৪ রান। পান্ডিয়ার পরের ওভারে আসে ইনিংসের সর্বোচ্চ ২১ রান; দুই ছক্কা আর এক চারে মাহমুদউল্লাহই নেন ১৯ রান। শেষ ওভারটা মনমতো না হলেও ১২০ রানটা লড়াই করার মতো স্কোর ছিল। তবে কোহলি আর ধাওয়ানের ব্যাটের ঝলকে শেষ পর্যন্ত তা আর পর্যাপ্ত হয়নি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ: ১৫ ওভারে ১২০/৫ (তামিম ১৩, সৌম্য ১৪, সাব্বির ৩২*, সাকিব ২১, মুশফিক ৪, মাশরাফি ০, মাহমুদউল্লাহ ৩৩*; বুমরাহ ১/১৩, অশ্বিন ১/১৪, জাদেজা ১/২৫, নেহরা ১/৩৩)। ভারত: ১৩.৫ ওভারে ১২২/২ (রোহিত ১, ধাওয়ান ৬০, কোহলি ৪১*, ধোনি ২০*; তাসকিন ১/১৪, আল-আমিন ১/৩০)। ম্যাচ সেরা: শিখর ধাওয়ান (ভারত)