এক যুগ হয়েছে যখন আমেরিকার এক এলিট কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে নতুন এক ওয়েবসাইট খুলেছিলেন। যার নাম দ্য ফেসবুক ডট কম। সেই ফেসবুক এখন বিশ্বের সর্ববৃহৎ সোশাল মিডিয়ায় পরিণত হয়েছে। এটাকে সবচেয়ে বড় যোগাযোগ মাধ্যম বলা হয়।
২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ হার্ভার্ড ক্রিমসনে বলেছিলেন, তখন কিশোর ছিলাম। কম্পিউটার আমাকে দারুণ উত্তেজিত করতো। আর সেখান থেকেই এর শুরু।
যার যার পরিচিত বন্ধুরা যখন কম্পিউটারে দেখা দিল তখন সবাই বিস্ময় প্রকাশ করেছিল। খুব অল্প সময়েই হাজার হাজার মানুষ ফেসবুকে চলে আসে।
কলাম্বিয়াতে আগে থেকেই সোশাল মিডিয়ার একটি প্লাটফর্ম ছিল যার নাম ‘সিইউকমিউনিটি’। এটা পরে ক্যাম্পাসের বন্ধু ও শিক্ষকদের যোগাযোগের মাধ্যমে পরিণত হয়। কিন্তু এর চেয়ে বেশি উত্তেজনাকর কিছু তৈরি করতে চেয়েছিলেন মার্ক।
হার্ভার্ড ক্রিমসন-এর এক কলামে লেখা হয়, কলাম্বিয়া এবং ইয়েলের মতো স্কুলগুলোকে সাহায্য করা হার্ভার্ডের শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব। গতানুগতিক সামাজিক জীবন এবং এর ধীরগতি থেকে সবাইকে মুক্ত করা প্রয়োজন। কলামটি এটা ফেসবুক স্টাইলের ফেনোফেস্ট হিসাবে পরিচিত পায়।
হার্ভার্ডের ক্রিমসনে এ বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পায়। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এটি দ্রুত গ্রহণ করে নেয়। এক সপ্তাহের মধ্যেই ৩ হাজার শিক্ষার্থীকে ফেসবুকে দেখা যায়। ২০০৪ সালের আরেক নিবন্ধে প্রকাশ পায় ফেসবুকের উত্থানের ইতিহাস।
গত ১২ তারিখে ফেসবুক তার এক যুগ পূরণ করেছে। এটা একটা মাইলস্টোন। ফেসবুকে এখন এত বেশি মানুষ যোগ দিয়েছেন যা আগে কখনো কোনো ক্ষেত্রেই ঘটেনি।
ফেসবুক বিশেষজ্ঞরা কিছু দিন আগে মন্তব্য করেন, মানুষের একের সঙ্গে অন্যের যোগাযোগের পদ্ধতি আগের চেয়ে অনেক বদলেছে। এ পরিবর্তন ধারণার চেয়েও বেশি। বিগত ১০০ বছরের মধ্যে দুনিয়ার মানুষ এখন সবচেয়ে বেশি একে অন্যের কাছে এসেছে।
এর আগে হাঙ্গেরিয়ান লেখক ফ্রিজাইস কারনিথি এক তত্ত্বের মাধ্যমে দুনিয়াবাসীর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির কথা বলেছিলেন যা ‘চেইনস’ নামে পরিচিতি পায়। বিজ্ঞানী স্ট্যানলি মিলগ্রাম এবং জেফরি ট্রাভারস মনে করতেন, পৃথিবীর সবাই ৬ ধরনের উপায়ে একে অন্যের কাছে আসতে পারে। কিন্তু ফেসবুক দেখিয়েছে যোগাযোগব্যবস্থা এ সময় দ্বিগুন সুবিধা দিচ্ছে।
শিল্পী, কবি এবং বিজ্ঞানীদের সবাই মনে করেন, এ পৃথিবীর প্রত্যেকে অন্য ৬ জন মানুষের দ্বারা সবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম। এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, পৃথিবীর সবাই অন্যের কাছ থেকে মাত্র ৩.৫৭ ডিগ্রি দূরে রয়েছেন। সব ফেসবুকের কল্যাণে। এখন পৃথিবীর ১.৫৯ বিলিয়ন মানুষ ফেসবুক ব্যবহারকারী।
তবে এ পরিসংখ্যানগত গাণিতিক হিসাবে পৃথিবীর ৬ বিলিয়ন মানুষের গণণা আপাতত করা হয়নি। তবে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অন্য ১.৫৯ বিলিয়ন মানুষের অভ্যাসগত পরিবর্তন ঘটে গেছে। এর আগের অবস্থা কেমন ছিল তা বুঝতে ‘বিফোর ফেসবুক ১’ হ্যাশট্যাগ চালু করা হয়। এতে এমন চিন্তার কথা বলা হয় যা মজার মনে হলেও বিস্ময়কর। কারো পরিচিত কেউ তার কাছাকাছি অবস্থানে থাকলে বা চলে যেতে থাকলে ‘বিফোর ফেসবুক ১’ একটি ফোন কল পাবে। একে বিস্ময়কর চিন্তা বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞ মিশেল ওরাক। কারণ ফেসবুকের মাধ্যমেই তিনি গোটা বিশ্বে আন্তরিক কিছু বন্ধু খুঁজে পেয়েছেন। ফেসবুকে যে মানুষগুলোকে কেউ এড়িয়ে যেতে চান, বিফোর ফেসবুক তার ব্যবস্থা করতে পারবে বলেই ধারণা করছেন তিনি।
আরেক বিশেষজ্ঞ ডেন জোনসের মতে, শ্রেণি, গোত্র, বর্ণ, লিঙ্গ এবং জাতিভেদে মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগের ব্যবস্থাকে আরো নিখুঁত করতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে বিফোর ফেসবুক।
তবে ফেসবুকের কিছু বিষয় ব্যবহারকারীদের কাছে বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। ২০১৩ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, ৩৬ ফেসবুক ব্যবহারকারী অতিরিক্ত শেয়ারিংয়ের ঘটনাকে বিরক্তির চোখে দেখেন। হাফিংটন পোস্টের কলামিস্ট অ্যান ব্রিনোফ লিখেছিলেন, ফেসবুক ব্যবহারে এমন আচরণ বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ সকালে যে ডিম দিয়ে নাস্তা সারলেন তার ছবি শেয়ার করা চরম বিরক্তি উদ্রেককারী ঘটনা ছাড়া আর কি হতে পারে?