উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস’ান কর্মসূচি এর সার্বিক উন্নয়নকাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চল্লিশ দিনের কর্মসূচির জন্য পরিষদের গৃহিত ৯টি প্রকল্পের মধ্যে বিশেষ করে ‘বালুখালী বিজিবির সম্মুখ হতে রহমতের বিল পর্যন্ত’ ইজিপি প্রকল্পে ১৮৫ জন শ্রমিক কাজ করার জন্য বরাদ্দদেওয়া হলেও প্রতিদিন ৯-১৪ জন শ্রমিক কাজ করছে এমন অভিযোগ এলাকাবাসির। ফলে একদিকে সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন হচ্ছে, অন্যদিকে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা কৌশলে আত্মসাৎ করেছে প্রকল্প কমিটির সভাপতিসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা।
উক্ত প্রকল্পের দায়সারা সংস্কারের কাজের জন্য এলাকার সাধারণ জনগণ ও উন্নয়ন সচেতনমহলের মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
সমপ্রতি জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাঈন উদ্দীন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জোবায়ের, ট্যাগ অফিসার মো. মোক্তার আহমদ বালুখালী বিজিবির সম্মূখস’ ইজিপি প্রকল্প পরিদর্শন করে অসন’ষ প্রকাশ করেছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, জন গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় প্রতিবছরের ন্যায় চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের কর্মহীন বেকার শ্রমিকদের জন্য দুর্যোগ ব্যবস’াপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় উখিয়া উপজেলার ১৫১৬ জন উপকারভোগী শ্রমিকের অনুকূলে এক কোটি ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫৫ টাকা বরাদ্দ দেয়।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে দেওয়া দুর্যোগ ব্যবস’াপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কর্তৃক এক পত্রে জানা যায়, উখিয়ার ৫ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের উপসি’তিতে পৃথকভাবে শ্রমিকসহ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় পালংখালী ইউনিয়নে ৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেয় স’ানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস’ান কর্মসূচি নির্দেশিকা অনুসরণ করে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য ওই পত্রে উল্লেখ করা হলেও মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সংশ্লিষ্টরা কিছুই মানছেন না বলে স’ানীয় গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, বালুখালী বিজিবির সম্মূখ থেকে রহমতের বিল নুরুল ইসলামের বাড়ি পর্যন্ত সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করতে ১৮৫ জন শ্রমিক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, প্রতিদিন জবকার্ডপ্রাপ্ত একজন শ্রমিক কাজে অংশগ্রহণ করে ২শ টাকা হারে মজুরি পাবে। কিন’ বালুখালীতে তার ব্যতিক্রম দেখা গেছে। প্রতিটি শ্রমিককে দেয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা।
উক্ত ইউনিয়নের এক আওয়ামীলীগ নেতা স’ানীয় ইউপি সদস্য উখিয়া-টেকনাফের এমপি আব্দুর রহমান বদির নাম ভাঙিয়ে প্রথম থেকে এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে তার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি করে আসছে। উক্ত প্রকল্পের অনুকূলে সরকারি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। উক্ত প্রকল্প কমিটির সভাপতিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দায়সারাভাবে কাজ করে এবং সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে কৌশলে বরাদ্দের সমুদয় টাকা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে আত্মসাতের পাঁয়তারা করছে এমন অভিযোগ একাধিক মহলের।
উল্লেখ্য, বালুখালী ২ নম্বর ওয়ার্ডে ২০১২-২০১৩, ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে ইজিপিপির আওতায় গৃহিত বালুখালী কেন্দ্রীয় কবরস’ান পরিষ্কার, জানাজার মাঠ ও বালুখালী কাশেমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাট প্রকল্প, বালুখালী দক্ষিণ পাড়া বাদশা মিয়া ড্রাইভারের বাড়ির সামনে কালভার্ট প্রকল্প, বালুখালী দক্ষিণ পাড়া আবুল কাশেমের বাড়ির সামনে কাঠের সেতু নির্মাণ প্রকল্প ও কর্মসৃজন প্রকল্পের আরসিসি ২০টি পাইপ স’াপন প্রকল্প, বালুখালী উচ্চ বিদ্যালয় ফুটবল খেলার মাঠ সংস্কার ও বালুখালীর ছরা-খাল পুনর্খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে প্রায় ২৩ লাখ টাকা ব্যয় প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে সরকারী নির্দেশিকা উপেক্ষা করে আত্মসাৎ করার ফলে গত বছর ১২ মে দুর্নীতি দমন কমিশন, জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপসহকারি পরিচালক মো. শফিউল্লা বাদি হয়ে উখিয়া থানায় পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করেন স’ানীয় ইউপি সদস্য ফজল কাদের ভূট্টোর বিরুদ্ধে।
মামলার সূত্রে জানা যায়, উল্লিখিত প্রকল্পের প্রত্যেক কমিটিতে ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফজল কাদের ভূট্টো সভাপতি ছাড়াও আপন ভাই মৌলানা আব্দুল কাদের, খালেদা আক্তার লাকি, জুলেখা বেগম, হাফেজ আবুল হাসান, জয়নাল আবেদীনকে সদস্য ও সদস্য সচিব করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি করে প্রকল্প অনুমোদন করে নিয়েছিল। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ইজিপি প্রকল্পেও ফজল কাদের ভূট্টো সভাপতি এবং তার আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি করা হয় বলেও স’ানীয় সূত্রটি জানায়।