সাগরপথে মানবপাচারকারীদের শীর্ষ নারী সদস্য মিনু আরা বেগমের বিরুদ্ধে এবার মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সাগরপথে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এ মামলা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার কক্সবাজার সদর মডেল থানায় দুদকের সহকারী পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় শুধু মিনু আরা বেগমকে আসামি করা হয়েছে। মিনু আরা বেগম কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ পাহাড়তলীর মাসুদুর রহমানের স্ত্রী। গতকাল রাতে কক্সবাজার সদর মডেল থানার অপারেশন অফিসার আবদুর রহিম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সূত্র জানায়, গত বছরে কক্সবাজার থানায় তার পাচারের শিকার হাবিবুল্লাহর বাবা শফিক আহমেদের করা একটি মামলায় (মামলা নম্বর ৪৩/২/২০১৫) গ্রেপ্তার হন মিনু আরা বেগম। সিআইডির তদন্তের সূত্রে মিনু আরা বেগমের ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ টাকার সন্ধান পাওয়া যায়। এ বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য দুদকের কাছে পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তারই পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে নামে দুদক।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখায় যায়, ২০১৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার আমিরাবাদের শফিক আহমেদ মিনু আরা বেগমের ব্যাংক হিসাবে আড়াই লাখ টাকা পাঠান। তার ছেলে হাবিবুল্লাহকে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর কথা বলে থাইল্যান্ডে আটকে রাখে পাচারকারীরা। মুক্তিপণের টাকা দেয়ার পরও চাহিদা মতো অতিরিক্ত টাকা না দেয়ায় থাইল্যান্ডে খুন হন ওই তরুণ। একইভাবে টেকনাফের নুরুল বশর ও রশীদের পরিবারের পক্ষ থেকে ২০১৪ সালের বিভিন্ন সময়ে ওই ব্যাংক হিসাবে ৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা পাঠান আবদুল হক নামের তাদের এক স্বজন। টাকা দেয়ার পরও ওই দু’জন এখনো মালয়েশিয়ায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এছাড়া ঝিনাইদহের দুই রাজমিস্ত্রি গোলাম মোস্তফা ও মো. শাহাবুদ্দিনের পরিবার থেকে মিনু আরা বেগমের ব্যাংক হিসাবে মোট চার লাখ টাকা পাঠানো হলেও মুক্তি পাননি তারা। এই প্রক্রিয়ায় বিভিন্নজনের কাছ থেকে মিনু আরা বেগমের ব্যাংক হিসাবে মোট ৩১ লাখ ৩২ হাজার টাকা জমা হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
সূত্রটি আরো জানায়, অনুসন্ধান শেষে দুদকের সহকারী পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ অর্থ পাচার আইনে মিনু আরা বেগমের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করলে কমিশন অনুমোদন দেয়। কমিশনের অনুমোদন স্বাপেক্ষে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধভাবে কক্সবাজারে ওই নারীর ব্যাংক হিসাবে এসব টাকা স্থানান্তর ও লেনদেন হওয়ার অভিযোগে মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।