পেকুয়ায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাঠ পুড়ছে ইটভাটায়। প্রতিদিন গড়ে ৫/৬টন বনাঞ্চালের অতিগুরুত্বপূর্ণ বনজ, ফলজ ও ঔষধি গাছের কাঠ পুড়ছে পেকুয়ার ৩টি ইটভাটায়।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদের মালিকানাধীন বারবাকিয়া ইউনিয়নের কাদিমাকাটাস্থ এস.বি.এম নামের ইটভাটা, আহমদ নবীর মালিকানাধীন টইটং ইউনিয়নের হাজী বাজারস্থ এ,বি,এম ইটভাটা এবং বারবাকিয়া ইউনিয়নের কাদিমাকাটা এলাকায় শাহাবউদ্দীনের মালিকানাধীন টইটং ইউনিয়নের হাজী বাজারস্থ এম.পি.এম ইটভাটায় প্রতিদিন এইসব বনাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। সেই সাথে ওই তিনটি ইটভাটায় প্রায় শতাধিক শিশু-শ্রমিক শ্রম-আইনের নীতিমালা ভঙ্গ কর শ্রম বিক্রি করছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাত্রিযাপন, চরম ঝুকিপূর্ণভাবে ইটভাটার চুল্লিতেও কাজ করে চলেছে প্রতিদিন ওই শিশুশ্রমিকরা। যার দরূণ যেকোন মূহুর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের যেকোন দূর্ঘটনা। অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনা মোকাবেলা বা তাদের পূনর্বাসনের কোন ব্যবস্থাও নেই এসব ইটভাটায়।
শিশু-শ্রমিক জুয়েল(৯), শওকত(১২), মো:জুাইদ(১০) ও মো সাগর(১৪) এর সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা টাকার জন্য চরম ঝুকিপূর্ণভাবে ইটভাটায় এই কঠোর পরিশ্রম করছে। তাদের দলে কিশোরগঞ্জের শুক্কুর আলী পুত্র শাহীনুর ইসলাম(৫)সহ সমবয়সী আরো অনেক শিশুও জড়িত রয়েছে শিশুশ্রমে। মূলত, শিশুদের এক প্রকার প্রলোব্ধ করে অবৈধ এই শ্রম কিনছে ইটভাটা মালিকরা।
শিশুশ্রম আইনের ধারা নং ৩৪য়ে স্পষ্ট করে বলা আছে যে, শিশু ও কিশোর নিয়োগে বাধা নিষেধ:-১.কোন পেশায় ও প্রতিষ্ঠানে কোন শিশুকে নিয়োগ করা যাইবে না বা কাজ করিতে দেওয়া যাইবে না।
২. কোন পেশায় বা প্রতিষ্ঠানে কোন কিশোরকে নিয়োগ করা যাইবে না বা কাজ করিতে দেয়া হইবে না , যদি না- (ক) বিধি দ্বারা নির্ধারিত ফরমে একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক কর্তৃক তাহাকে প্রদত্ত সক্ষমতা প্রত্যয়নপত্র মালিকের হেফাজতে থাকে এবং (খ) কাজে নিয়োজিত থাকাকালে তিনি উক্ত প্রত্যয়নপত্রের উল্লেখ সম্বলিত একটি টোকেন বহন করেন। ধারা ৩৫: শিশু সংক্রান্ত কতিপয় চুক্তি নিষেধ, কোন শিশুর মাতা পিতা বা অবিভাবক শিশুকে কোন কাজে নিয়োগের অনুমতি প্রদান করিয়া কাহারও সহিত কোন চুক্তি করিতে পারিবেন না। কিন্তু এর কোনটাই মানা হচ্ছে না পেকুয়ার ইটভাটাসমূহে।
উক্ত আইনে শিশুদের বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, ধারা-৬৩. শিশু: চৌদ্দ বৎসর বয়স পূর্ণ করেন নাই এমন কোন ব্যক্তিই শিশু।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইটভাটার মালিক সংরক্ষিত বনাঞ্চালের গাছের কাঠ পুড়ানোর বিষয়ে বলেন, আমারা টাকা দিয়েই জ্বালানি কাঠ কিনছি, তা কোথায় থেকে কিভাবে আনছে তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। এবং শিশুশ্রমের ব্যাপারে বলেন, শিশুরা কাজ করছে, চুরি তো করছে না। টাকার বিনিময়ে এটা হচ্ছে বিধায় এখানে কোন পূনর্বাসনের বিষয় আসছে না। তারা ইটভাটার পরিবেশ দেখেশুনে কাজ করছে। এতে তাদের পোষালে করবে নয়তো করবে না। মানবধিকার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, এটা আমাদের ব্যবসা। মানবতার দোকান দিইনি।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মারুফুর রশীদ খান বলেন, বনাঞ্চলের কাঠ যাতে ইটভাটায় ব্যবহার করতে না পারে এই ব্যাপারে ইতোমধ্যে বন বিভাগকে মনিটরিংয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরেও ইটভাটায় বনাঞ্চালের কাঠ ব্যবহার এবং শিশুশ্রমে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।