উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পেকুয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে পেকুয়া সদর, শীলখালী, রাজাখালী, মগনামা, উজানটিয়া, টৈটং ও বারবাকিয়া ইউপির ৬৩টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলছে।
জেলা নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপের এ নির্বাচনে ৭ ইউপিতে ১ লাখ ১ হাজার ২৪৫ জন ভোটার রয়েছে। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার হচ্ছে ৫২ হাজার ৪৫২ জন এবং মহিলা ভোটার ৪৮ হাজার ৭৯৩ জন। আর এতে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ৩২ জন। এছাড়া মেম্বার ও মহিলা মেম্বার পদে লড়ছেন আরও ৩৪০ জন প্রার্থী। ৭ ইউপিতে স্থায়ী ভোটকক্ষের সংখ্যা ২৯১টি এবং অস্থায়ী ৬৩টি। এর মধ্যে ২১টি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পেকুয়া সদর ইউনিয়নে মোট ভোটার হচ্ছে ২৬ হাজার ৫৪৫ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৩ হাজার ৫৬১ জন এবং মহিলা ভোটার ১২ হাজার ৯৮৪ জন। ওই ইউনিয়নে ধানের শীষ প্রতীকে লড়ছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাহাদুর শাহ, নৌকা প্রতীকে লড়ছেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেটে কামাল হোসেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন শাহ আলম (আনারস), নাছির উদ্দিন (হাতপাখা)।
এখানে ৯টি ভোটকেন্দ্রে স্থায়ী ভোটকক্ষের সংখ্যা ৭৬টি এবং অস্থায়ী ৬টি। এর মধ্যে মইয়াদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পেকুয়া জিএমসি ইনস্টিটিউশন, আনোয়ারুল উলুম আলিম মাদ্রাসাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
শীলখালী ইউনিয়নে মোট ভোটার ৯ হাজার ২১৮ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৪ হাজার ৭০৯ জন এবং মহিলা ৪ হাজার ৫০৯ জন। এখানে ৯টি ভোটকেন্দ্রে স্থায়ী ভোটকক্ষ ২৬টি এবং অস্থায়ী ৭টি। এতে বিএনপির প্রার্থী নুরুল হোছাইন, আ’লীগের প্রার্থী কাজীউল ইনসান ও জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জাহেদুল করিম (আনারস)। এ ইউপির পেঠান মাতবরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাজিরঘোনা ভোটকেন্দ্রকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়েছে।
রাজাখালী ইউনিয়নে ১৫ হাজার ৪৪০ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৮ হাজার ২০০ জন এবং মহিলা ৭ হাজার ২৪০ জন। ৯টি ভোটকেন্দ্রে স্থায়ী ভোটকক্ষ ৪৪টি এবং অস্থায়ী ৮টি। এতে বিএনপির প্রার্থী আনোয়ার হোসেন সিকদার , আ’লীগের প্রার্থী আজমগীর চৌধুরী, জাতীয় পার্টির শাহাব উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলনের হেলাল উদ্দিন (হাতপাখা)। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা হুমায়ুন কবির (চশমা), ছৈয়দ নুর (আনারস), নুরুল আবছার বদু (টেলিফোন), শামসুন্নাহার (রজনীগন্ধা)। ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বিইউআই মাদ্রাসা কেন্দ্র, বদিউদ্দিন পাড়া এবতেদায়ি মাদ্রাসা কেন্দ্র, লালজানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাতবরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রকে।
মগনামা ইউনিয়নে ভোটার ১৩ হাজার ১৮৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬ হাজার ৮৯৮ জন এবং মহিলা ৬ হাজার ২৮৯ জন। ৯টি ভোটকেন্দ্রে স্থায়ী ভোটকক্ষ ৩৮টি এবং অস্থায়ী ১০টি। এতে বিএনপির প্রার্থী শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম, আ’লীগের প্রার্থী খাইরুল এনাম ও জাতীয় পার্টির ইউনুছ চৌধুরী। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জামায়াত নেতা শহিদুল মোস্তফা চৌধুরী (আনারস)। এ ইউনিয়নে সাতঘরপাড়া কমিউনিটি সেন্টার ও দক্ষিণ মগনামা কাশেমুল উলুম মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।
উজানটিয়া ইউনিয়নে মোট ভোটার ৮ হাজার ৭১৯ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৪ হাজার ৫১৭ জন এবং মহিলা ৪ হাজার ২০২ জন। ৯টি ভোটকেন্দ্রে স্থায়ী ভোটকক্ষ ২৬টি এবং অস্থায়ী ১২টি। এতে বিএনপির প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী মিন্টু, আ’লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান এম. শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, জাতীয় পার্টির দেলোয়ার করিম চৌধুরী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুল হক (আনারস)। এখানে তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হলো পশ্চিম উজানটিয়া জুনিয়র হাইস্কুল, জালিয়াপাড়া ইফাত শেল্টার কেন্দ্র ও মধ্যম উজানটিয়া ভেলুয়ারপাড়া কারিতাস শেল্টার ভোটকেন্দ্র।
টৈটং ইউনিয়নে ভোটার ১৬ হাজার ৫৬৯ জন। পুরুষ ভোটার ৮ হাজার ৫৮২ জন এবং মহিলা ভোটার ৭ হাজার ৯৮৭ জন। এখানে ৯টি কেন্দ্রে স্থায়ী ভোটকক্ষ ৪৭টি এবং অস্থায়ী ১১টি। এতে বিএনপির প্রার্থী রমিজ উদ্দিন আহমদ, আ’লীগ প্রার্থী জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী, হাসান শরীফ চৌধুরী (আনারস), শহিদুল্লাহ বিএ (ঘোড়া)। চারটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হল বনকানন মাদ্রাসা কেন্দ্র, জালিয়ারচাং মাদ্রাসা কেন্দ্র, নাপিতখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শেয়ার আলী মাস্টারপাড়া ভোটকেন্দ্র।
বারবাকিয়া ইউনিয়নে মোট ভোটার হচ্ছে ১১ হাজার ৫৬৭ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ হাজার ৯৮৫ জন এবং মহিলা ভোটার ৫ হাজার ৫৮২ জন। এখানে ৯টি ভোটকেন্দ্রে স্থায়ী ভোটকক্ষের সংখ্যা ৩৪টি এবং অস্থায়ী ভোটকক্ষের সংখ্যা ৯টি। এতে বিএনপির প্রার্থী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম, আ’লীগ প্রার্থী জিএম আবুল কাসেম ও শহিদুর রহমান ওয়ারেচী। স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ এ এইচ এম বদিউল আলম (চশমা)। এর মধ্যে সবজীবনপাড়া, মৌলভীবাজার ফারুখিয়া মাদ্রাসা ও বারাইয়াকাটা ফাজিল মাদ্রাসাকে বারবাকিয়া ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ। এতে ৩৪০ জন সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যও লড়ছেন।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মারুফুর রশিদ খান জানান, নির্বাচনে আইনশৃংখলা রক্ষায় ৪ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ১টি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও ৩টি মোবাইল টিম মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিকেন্দ্রে ১০ জন আনসার ও ৮ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন জানান, ৭ ইউনিয়নের মধ্যে পেকুয়া সদর ও রাজাখালী ইউনিয়নের উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাসান মুরাদ চৌধুরী বারবাকিয়া, টইটং ও শিলখালী ইউনিয়নে এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুনিরুজ্জামান রাব্বানী ও মগনামা এবং উজানটিয়ায় উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদ চৌধুরী রিটানিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করছেন একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ছয়জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।