পেকুয়া উপজেলায় এলজিএসপির ৪২ প্রকল্পের ৬৭লক্ষাধিক টাকার বিভিন্ন গ্রামীন অবকাটামোগত উন্নয়ন কাজে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম ও দূর্নীতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের তদারকারীর অভাবে পেকুয়া সাত ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবরা মিলেমিশে নামেমাত্র প্রকল্প বাস্তবায়ন করে এলজিএসপির বিপুল পরিমান সরকারী অর্থ লোপাট করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১অক্টোবর পেকুয়া উপজেলা বিজিসিসি কমিটির সভায় এলজিএসসি প্রকল্পের অধীনে ২য় কিস্তিতে বাস্তবায়নের ৪২টি প্রকল্প অনুমোদন করে প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৬৭লাখ ৯৯হাজার ৭৯০ টাকা। এরপর প্রকল্প কমিটির ব্যাংক হিসেবে প্রকল্পের অধীনে বরাদ্দে অর্থ জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে হস্থান্তর করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এলজিএসপি প্রকল্পের ২য় প্রকল্পের অধীনে পেকুয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নের পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কমিটির লোকজন প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে যেনতেনভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সরকারী বিপুল পরিমান বরাদ্দ হাতিয়ে নিয়েছেন। পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড়ের সৈকত পাড়া জাহাঙ্গীরের বাড়ী হইতে পশ্চিমে বাকী অংশে রাস্তার ফ্লাট সলিংকরন এর জন্য ৫লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এ প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট দুই-আড়াই লাখ টাকা ব্যয় করে প্রকল্প সমাপ্ত করেছেন। পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড়ের সাগর পাড়া মহি উদ্দিনের বাড়ী হইতে মোক্তারে বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা ফ্লাট সলিংকরনের জন্য ৫লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলে এ প্রকল্পেও নিয়ম অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন করেনি সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে উজানটিয়া ইউনিয়নের ৫টি প্রকল্পের অধীনে ৮লক্ষাধিক টাকারও বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়। সরেজমিনে এসব প্রকল্পে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, প্রকল্প কমিটির লোকজন নিুমানের ইট দিয়ে রাস্তা ফ্লাট সলিং করে কাজে ব্যাপক দূর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন।
শিলখালী ইউনিয়নের হাজীর ঘোনা রাস্তা পার্ট ১ ও হাজীর ঘোনা রাস্তা পার্ট ২ এর অধীনে ৮লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, যথানিয়মে প্রকল্প এখানে বাস্তবায়ন করা হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়নে ইউপি চেয়ারম্যান সীমাহীন দূর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। তবে শিলখালী ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইন
জানান, তার ইউনিয়নে যথানিয়মের এলজিএসপির প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কোন ধরনের দূর্নীতি করা হয়নি।
জানা গেছে, টইটং ইউনিয়নের ৫টি এলজিএসপি প্রকল্পের অধীনে ৮লক্ষাধিক টাকার উপরে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ ইউনিনের ৫ প্রকল্পেও নিয়মানুয়ী কাজ হয়নি। টইটং উচ্চ বিদ্যালয় সড়কে ফ্লাট সলিং করনের জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও কোন কাজ চোখে পড়েনি। মৌলানা মোস্তাফিজুর রহমাস সড়ক ফ্লাট সলিংয়ের জন্য ১লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও বরাদ্দের সিংহভাগই লুটপাট হয়েছে।
বারবাকিয়া ইউনিয়নের ৭টি প্রকল্পের অধীনে ৭লক্ষাধিক টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সরেজমিনে এ ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রকল্পে গিয়ে দেখা গেছে, বরাদ্দ অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন করেনি সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কমিটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এলজিএসপি ২য় পর্যায়ের উন্নয়ন কাজে একইভাবে উপজেলার মগনামা, রাজাখালী ইউনিয়নের ১৯টি প্রকল্পেও দূর্ণীতি হয়েছে। এখানে প্রকল্প কমিটি যেনতেনভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সরকারী বরাদ্দ লুটপাট করেছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পেকুয়ার সাত ইউনিয়নের এলজিএসপি প্রকল্প তদারকীর দায়িত্বে থাকা পেকুয়া এলজিইডি অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী বাবু হারু কুমার পাল সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কমিটির লোকজনের কাছ থেকে থেকে উৎকোচ আদায় করে প্রকল্পে দূর্নীতিতে সহায়তা করেছেন। উল্লেখ্য যে, বিগত ৬/৭ বছর ধরে ওই প্রকৌশলী পেকুয়া উপজেলায় কর্মরত থাকার সুবাধে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প থেকে লাখ লাখ টাকার ঘুষ আদায় করে চরমভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ইতিপূর্বেও নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগে হারু কুমার পালকে পেকুয়া উপজেলা থেকে বেশ কয়েকবার অনত্র বদলী করলেও অবৈধ টাকার জোরে ঢাকায় গিয়ে রাতারাতি বদলী আদেশ ঠেকিয়ে পেকুয়ায় কর্মরত রয়েছে। স্থানীয়রা অনেকেই জানান, পেকুয়া এলজিইডির উপ সহকারী প্রকৌশলী হারু কুমার পাল কোনভাবেই পেকুয়ার মায়া ত্যাগ করতে চাননা!
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে হারু কুমার পালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ অস্বীকার করে জানান, পেকুয়ার এলজিএসপি প্রকল্পে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা তা আবারো খতিয়ে দেখা হবে। তবে তিনি নিজেও এলজিএসপি প্রকল্পের কারে কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণ করেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নের এলজিএসপি প্রকল্পের ১ম পর্যায়ের ৩৪পি প্রকল্পের ৪৭লক্ষাধিক টাকার উন্নয়ন কাজে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতি আশ্রয় নিয়ে সরকারী বরাদ্দ হাতিয়ে নিলেও এর বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা।