পেকুয়ায় ২০১৬ সালের প্রথম ৪ মাসে মহিলাসহ ৪ নিরহ ব্যক্তি খুন হয়েছেন। এছাড়াও দুই পক্ষে প্রকাশ্যে গুলিবিনিময়ের ঘটনা ও শিশু নির্যাতনের মাত্রা চরম আকার ধারণ, চুরি ছিনতায়, ডাকাতি ও মাদকের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আতংকে দিন কাটছে এলাকাবাসীর। এমনকি মাদকের টাকা না পেয়ে নিজ পুত্র গর্ভধারীনি মাকে হত্যা করতে হাত পর্যন্ত কাপেনি।
দিন দিন পেকুয়ার আইনশৃংখলার চরম অবনতি হওয়ায় থানা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর থেকে উত্তরন ও করণীয় নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় জনগণ উঠান বৈঠক শুরু করেছে। এর মাধ্যমে অপরাধীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় ভাবে মোকাবেলারও সিন্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০১৬ বছরটি পেকুয়াবাসীর জন্য আতংক আর উদ্বেগের দিন। গত ২ফেব্র“য়ারী রাতে রাজাখালী ইউনিয়নের নতুনঘোনা এলাকার মৃত আশকর আলীর ছেলে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা সাবেক এমইউপি দেলোয়ার হোসেন প্রকাশ দেলুকে (৬২)মুঠোফোনে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে দূর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে।
গত ২০ মার্চ সকালে নিজবাড়িতে মাদকের টাকার জন্য গর্ভধারিনী মা দিলোয়ারা বেগম (৪৫)কে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেন তাঁর ছেলে আজিজুর রহমান।
গতকাল ২৭মার্চ রবিবার সকাল ১০টার দিকে টইটং ইউনিয়নের জালিয়ার চাং উত্তর ঘোনা বিলের মাঝ খানে ফসলি জমির ধান ক্ষেত থেকে সিএনজি চালক মো.হোসাইন (১৮) এর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পেকুয়া থানা পুলিশ। সে ওই ইউনিয়নের গর্জনীয়াপাড়া এলাকার ওমান প্রবাসি আব্বাস উদ্দিনের ছেলে।
সর্বশেষ গত ১ মে রাতে রাজাখালী হাজ্বী মার্কেট থেকে বাড়ি ফেরার পথে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা নৃশংসভাবে খুন করে রাজাখালী ইউনিয়নের মাতবর পাড়ায় মাহাববুর রহমান নামের এক লবন ব্যবসায়ীকে। তিনি ওই গ্রামের আলহাজ্ব জহির আহমদ মাতবরের পুত্র। এসব খুনের কিছু আসামী আটক আর মামলা হলেও পুলিশ প্রশাসন রহস্য উৎঘাটনে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি দাগী আপরাধীরা দূর্বল অভিযানে পার পেয়ে যাওয়ায় বার বার অপরাধ সংগঠিত করছে বলে এলাকাবাসীর ধারণা।
এছাড়া ২৪ ফেব্র“য়ারী দুপুর দেড়টার দিকে পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের টেকঘোনাপাড়া এলাকায় দুই বাহিনীর মধ্যে প্রকাশ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় অবৈধ বন্দুকের গুলিতে পথচারী দেড় বছরের শিশুসহ তার পিতা ও এক স্কুল ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়। এঘটনায় পুলিশ এখনো পর্যন্ত ওই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি।
২৫ ফেব্র“য়ারী পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাইম্যাখালী এলাকায় দিকে পূর্ব শূত্র“তার জের ধরে জোবাইরের দু’শিশু সন্তান মো: আবু হোছাইন (৩), ছোট মণি(৬) উপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছিল দূর্বৃত্তরা।
২৮ মার্চ পেকুয়া বাজারে নৌকা প্রতীকের প্রচারণায় অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলি চালালেও ওই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেনি পেকুয়া থানা পুলিশ। ৩০ মার্চ অপহরণ করা হয় উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মো:শহিদুল্লাহকে। তাকে উদ্ধারে পেকুয়া থানা পুলিশের কোন ধরণের তৎপরতা দেখা যায়নি। বারবাকিয়ায় নৌকার পথসভায় শক্তিশালী ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালেও প্রশাসন কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়নি।
৩১ মার্চ স্থানীয় ইউপি নির্বাচনের দিন উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে কেন্দ্র দখল করতে অবৈধ বন্দুকের শত শত রাউন্ড গুলি বর্ষন করলেও থানা পুলিশ এখনো পর্যন্ত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যাপকহারে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ জনগণ নিরপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে মেহেরনামার শাহালম, আব্দু শুক্কুর, রাজাখালীর সলিম, ইসমাঈল, টইটংয়ের মো: হোছাইন, বাচ্চু, মগনামার গিয়াসউদ্দিন, মো: হাশেম, উজানটিয়ার জালাল উদ্দিনসহ নিরহ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
এপ্রিলে মগনামা ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি সুলতান মুহাম্মদ রিপনকে বাড়ি থেকে অপরহরণ করে একটি বিলের মাঝে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। অল্পের জন্য সে রক্ষা ফেলেও পঙ্গু অবস্থায় দিনযাপন করছে।
এছাড়াও পেকুয়া থানা নাগের ডগায় চৌমহুনী ষ্টেশনে একে একে দুটি দোকান চুরি হয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মোখিন হলেও থানা পুলিশের ভুমিকা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দেয়। চোর সিন্ডিকেটের দল গরু চুরির যেন প্রতিযোগিতা শুরু করেছিল।
গত ৪ মাসে ৫০টির মত গরু চুরি হয়ে যায়। মটর সাইকেল বাড়ির প্রধান গেইট কেটে চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল। এমনকি রাত সাড়ে ৭টার পর স্থানীয় ব্যবসায়ী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা নিজ বাড়িতে চলে যায়। কোন কারণে রাত ১০টা পার হয়ে গেলে তাদের অর্জিত টাকা হাতিয়ে নেয় ছিনতায়কারীরা। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির সম্মোখিন হচ্ছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা এস আই শফি জানান, ইতিমধ্যে মা হত্যাকারী ছেলেকে আটক করা হয়েছে এবং আদালতে তার মাকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন। গলা কাটা সিএনজি চালকের হত্যা রহস্যও উৎঘাটন হয়েছে। বাকী হত্যাকান্ড সম্পূর্কে তদন্তের শর্তে গোপন রাখা হচ্ছে। এছাড়াও বিচ্ছন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও পুলিশী অভিযান অব্যাহত ও অবৈধ উদ্ধারে সব চেষ্টায় পুলিশ চালাচ্ছে।