ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পরপরই নড়েচড়ে উঠেছে পেকুয়ার ৭ইউনিয়নের অধিবাসী থেকে শুরু করে সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ইতিমধ্যে কোমর বেঁধে নির্বাচনী প্রচারনায় নেমে পড়েছেন ৭ ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশতাধিক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। নির্বাচন কমিশন দলীয়ভাবে নির্বাচনের ঘোষনায় দেওয়ায় এবার নৌকা-ধানের শীষে লড়াই হবে। পেকুয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকরা তাদের নিজ নিজ প্রার্থী নিয়ে মাঠ কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা দলীয় টিকিট পেতে স্ব স্ব দলের সিনিয়র নেতাদের সান্নিধ্যে গিয়ে মন জয়সহ বিভিন্ন ভাবে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছেন আ’লীগ, বিএনপি, জামায়াতসহ প্রায় সব দলের নেতা ও সমর্থকরা। পেকুয়ার কয়েকটি ইউনিয়নে অত্যন্ত জমকালোভাবে তাদের আ.লীগ, বিএনপি-জামায়াত দলীয় প্রার্থী ঘোষনা দিয়েছেন । পেকুয়া উপজেলার একাধিক দলীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারই প্রথম রাজনৈতিক দলের ব্যানারে ইউপি নির্বাচন হচ্ছে। এনিয়ে দলীয় নেতাকর্মীরাও পাচ্ছেন বিশেষ মর্যাদা। কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হবে বলে আগেই রাজনৈতিক দলগুলো ঘোষনা দিয়ে রেখেছেন। তবে তৃনমুল নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে যাতে একক প্রার্থী দেওয়া সম্ভব হয় সে জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তা কতটুকু সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন অনেকে। কারণ হিসেবে নেতাকর্মীরা দেখছেন দলীয় কোন্দলকে। এছাড়া স্থানীয় সব নেতা চাইবেন নিজের পছন্দের বা গ্রুপের লোককে সমর্থন দিতে। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ইতিমধ্যে আ’লীগের উপজেলা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি একজনকে প্রার্থী হতে বললেও জেলার সাধারন সম্পাদক বা উপজেলার সহ-সভাপতি বা ইউনিয়ন আ.লীগ সভাপতি আরেকজনকে প্রার্থী হতে উদ্বুদ্ধ করছেন। এ নিয়ে চলছে চরম লবিং-গ্রুপিং। এ অবস্থা আ’লীগে লক্ষ্য করা গেলেও বিএনপি কিংবা জামায়াতের ক্ষেত্রে তেমন একটা নেই। বলা যায়, জামায়াত ইতিমধ্যে তাদের প্রার্থী অনেকটা ঠিক করে ফেলেছে। এব্যাপারে বিএনপিও কিছুটা এগিয়ে আছে। তবে দলীয় ভাবে একক প্রার্থী দেওয়া সম্ভব হলেও বিএনপির সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচন সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে জামায়াতের সন্দেহ আছে। পেকুয়া উপজেলার ৭ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রায় অর্ধ শতাধিক প্রার্থী দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এদের অর্ধেকেরও বেশি হচ্ছে আ’লীগ ও বিএনপি দলীয়। অভিযোগ আছে, এদের অধিকাংশের পেছনে জেলা ও উপজেলা ও ইউনিয়ন দলীয় নেতাদের অনুপ্রেরণা আছে। পেকুয়া উপজেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাষ্টার আজমগীর চৌধুরী বলেন, চেয়ারম্যান পদে দলের যাতে একজন প্রার্থী থাকে সেজন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য আগ্রহী প্রার্থীদের কাছ থেকে ইতিমধ্যে ইউনিয়ন আ.লীগের মাধ্যমে আবেদন নেওয়া হয়েছে। পেকুয়া উপজেলা জামায়াতে আমীর আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের একক প্রার্থী দিতে সমস্যা হবে না। প্রার্থী ঠিক আছে। কিন্তু জোটগতভাবে একক প্রার্থী দেওয়া হবে কিনা সে ব্যাপারে এখনো আলোচনা হয়নি। এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে আ’লীগ ও বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী রয়েছে। পেকুয়া সদর ইউনিয়নে আ’লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে দৌঁড়ঝাপ করছেন পেকুয়া উপজেলা আ.লীগের সাধারন সম্পাদক আবুল কাশেম, যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, আ.লীগ নেতা এড. কামাল হোসেন ও জহিরুল ইসলাম, বিএনপি থেকে একক প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম.বাহাদুর শাহ। এছাড়া সমাজসেবক শাহ আলম ও ওমর ফারুখ সতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানাগেছে। শিলখালী ইউনিয়নে বিএনপি থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইন একক প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যদিকে আ.লীগও শিলখালীতে একক প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন উপজেলা আ.লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক কাজিউল ইনসানকে। মগনামা ইউনিয়নে আ’লীগ থেকে সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি খাইরুল এনাম, আ.লীগ নেতা ইউনুছ চৌধুরী, আনোয়ারুল আজিম বাবুল, সাবেক মেম্বার রশিদ আহমদ, যুবলীগ নেতা মোজাম্মেল হক, বিএনপি থেকে ফয়সাল চৌধুরী, হারুনুর রশিদ মানিক ও শরাফুতুল্লাহ ওয়াসিম দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহী। আর জামায়াত থেকে শহিদুল মোস্তফাকে একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা দেওয়া হয়েছে। টৈটং ইউনিয়নে আ’লীগ সাধারন সম্পাদক জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে দলীয় একক প্রার্থী ঘোষনা দিয়েছেন আ.লীগ। বিএনপি থেকে সাবেক চেয়ারম্যান রমিজ আহমদ, বর্তমান চেয়ারম্যান জেড.এম মোসলেম উদ্দিন দলীয় প্রার্থী হতে জোর লবিং চালাচ্ছেন। উজানটিয়া ইউনিয়নে আ’লীগ থেকে ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি তোফাজ্জল করিম, বর্তমান চেয়ারম্যান এটিএম শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, বিএনপি থেকে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক রেজাউল করিম মিন্টু, এমজারুল হক ও আজিজুল হক দলীয় মনোনয়ন নিয়ে মাঠে নামতে চাচ্ছেন। রাজাখালী ইউনিয়নে আ’লীগ থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বাবুল, উপজেলা আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আজমগীর চৌধুরী, মহিলা আ.লীগ নেত্রী উম্মে কুলসুম মিনু দলীয় সমর্থন পেতে জোর লবিং চালাচ্ছেন। বিএনপি থেকে বর্তমান ইউপি সদস্য নুরুল আবছার বদুকে একক প্রার্থী করার জোর তদবির করছেন বলে শুনা যাচ্ছে। তবে ওই ইউনিয়নে জামায়াত থেকে হুমায়ুন কবিরকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঠিক করা হয়েছে। বারবাকিয়া ইউনিয়নে আ’লীগ থেকে যুবলীগ নেতা জি.এম আবুল কাশেম, আ.লীগ নেতা মফিজুর রহমান, যুবলীগ নেতা মো.বারেক মনোনয়ন পেতে তদবির চালাচ্ছেন। ওই ইউনিয়নে বিএনপি থেকে একক প্রার্থী নির্ধারন করেছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি সাইফুল্লাহকে। তবে জামায়াত থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান মাওলানা বদিউল আলম একক প্রার্থী হিসেবে আগে থেকেই নিশ্চিত রয়েছেন। এ লক্ষ্য নিয়ে তারা স্ব স্ব অবস্থানে থেকে প্রচার প্রচারণা ও জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে মেম্বার পদে ৭ ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে ৪শ প্রার্থী জোর প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে প্রতিটি ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের তীব্র প্রতিদ্বন্ধিতার আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। তবে সবদলের প্রার্থীরা বলছেন দলীয় মনোনয়ন যিনি পাবেন তার পক্ষে কাজ করবেন তারা।