কক্সবাজার রিপোর্ট :
পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের কোন্দল চরমে পৌঁছেছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আ.ক.ম সাহাবউদ্দিন ফরায়েজী হত্যাকা-ের পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পদ নিয়ে ভেতরে ভেতরে এই কোন্দল দেখা দিলেও সামনের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের একক প্রার্থী নির্ধারণ নিয়ে এই কোন্দল এখন প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে। খোদ গত শনিবার উপজেলা আওয়ামীলীগের পাল্টা জরুরী বর্ধিত সভায় জেলা আওয়ামীলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক, পেকুয়ার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কামাল হোসেনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে পদস্থ এক নেতা। এতে ত্যাগী ও একনিষ্ট তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
দলীয় সূত্র জানায়, এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য গিয়াসউদ্দিনসহ বর্তমান উপজেলা কমিটির অনেক নেতা একুশে ফেব্রুয়ারীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন, দলীয় নানা কর্মসূচী পালন ও আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পেকুয়ার সাতটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে দলের একক প্রার্থী নির্ধারণ নিয়ে জরুরী বর্ধিত সভা ডাকেন। কিন্তু ওই সভা প্রত্যাখান করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
যোগাযোগ করা হলে পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আ.ক.ম সাহাবউদ্দিন ফরায়েজী নির্মমভাবে খুন হন কয়েকমাস আগে। এতে সভাপতির পদটি শুন্য হলে সাবেক সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে ঘোষণা দিলে তা অনেকেই মানতে পারেননি। এনিয়ে দলের মধ্যে অনৈক্য দেখা দিলে জেলা আওয়ামীলীগ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন এবং আমাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন।’
মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন বলেন, জেলা আওয়ামীলীগ মৌখিকভাবে আমাকে এই দায়িত্ব দেওয়ার পর দলীয় নানা কর্মসূচী পালন ও সামনের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের একক প্রার্থী নির্ধারণের জন্য জরুরী বর্ধিত সভা আহবান করি। কিন্তু বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম জেলা আওয়ামীলীগের এই নির্দেশ মানতে চাইছেন না। এমনকি তিনি পাল্টা জরুরী বর্ধিত সভা ডাকলে সেখানেও আমি উপস্থিত হয় দলের ঐক্যের স্বার্থে। কিন্তু বক্তব্য প্রদানের সময় আমাকে যখন একজন নেতা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে সম্বোধন করেন, তখন তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। বলেন, ওনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নন, ওনি ভূঁয়া।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামীলীগের একাধিক নেতা বলেন, ‘বর্তমানে পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগে হাইব্রিড নেতাদের ভিড়ের কারণে বয়োজ্যেষ্ঠ, ত্যাগী ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত ব্যক্তিরা দলের দায়িত্ব পাওয়া তো দূরের কথা, ধারে-কাছেও ভিড়তে পারে না। তবে সম্প্রতি জেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব আসায় তৃণমূলে ফের উজ্জ্বীবিত হওয়ার পথে কোনঠাসা হয়ে থাকা সিনিয়র ও বয়োজ্যেষ্ঠ নেতারা। এতে অনেকটা চাঙাভাব দেখা যায় তৃণমূলেও।’
তারা আরো বলেন, ‘আবুল কাশেমের ডাকা পাল্টা জরুরী বর্ধিত সভায় একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পরীক্ষিত সৈনিক মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কামাল হোসেনের সঙ্গে চরম বেয়াদবী ও তাকে শারিরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।’
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কামাল হোসেনের সঙ্গে যে অশালীন আচরণ করা হয়েছে, তা আমরা অবগত হয়েছি। বিষয়টি নিয়ে করণীয় নির্ধারণের জন্য আমরা অচিরেই বৈঠকে বসবো। তবে এ ধরণের কর্মকা- কোন অবস্থাতেই বরদাশত করা হবে না দলের মধ্যে।’
তবে অভিযুক্ত পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের বক্তব্য নেওয়ার জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, ‘জরুরী বর্ধিত সভায় কামাল হোসেনের সঙ্গে এ ধরণের কোন আচরণ তিনি করেননি। তাছাড়া ওই বৈঠকে কামাল হোসেন গেলেও বেশিক্ষণ থাকেননি। বৈঠকে উপস্থিত ইউনিয়ন পর্যায়ের অনেক নেতাও স্বাক্ষী দেবেন তা।’
আবুল কাশেম বলেন, ‘আমি পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, আমার সম্মান আছে। কিন্তু কিছু সাংবাদিক সম্মান হানি করার জন্য আমার এবং দলের বিরুদ্ধে কাজ করছে। যদি এ ধরণের কোন সংবাদ প্রকাশ হয়, তাহলে ওইসব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেব, প্রয়োজনে আদালতে মামলা করব।’