দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে দেশটিতে এরই মধ্যে ৭ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এবারের তুষারঝড়ের মাত্রা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া দফতর বলছে, রাজধানী ওয়াশিংটনে প্রবল তুষারঝড় বইছে। শনিবারের মধ্যে ওয়াশিংটন ও আশপাশের এলাকায় আরও ২ ফুটের মতো তুষারপাত হতে পারে। তুষারঝড়ের কবলে পড়ে এ পর্যন্ত ১০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে টেনেসি এবং নর্থ ক্যারোলাইনায় তুষারঝড়ে আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নর্থ ক্যারোলাইনার গভর্নর প্যাট ম্যাককরি জানান, তুষারপাতের কারণে গাড়ি দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। বরফে পিছলে গিয়ে টেনেসির পূর্বাঞ্চলে আরেক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন এক নারী। এছাড়া বরফে আটকে দুইজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে এ দুই রাজ্যে। ওয়াশিংটন, বাল্টিমোর, ফিলাডেলফিয়া ও নিউইয়র্কে ঝড়ের গতি বেড়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এ অঞ্চলগুলোয় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৫০ মাইল পর্যন্ত হতে পারে। ভারি তুষারপাতের সঙ্গে প্রচন্ড ঝরো ঠান্ডা বাতাস ও বজ্রপাতের আশঙ্কা রয়েছে।
অনেক স্থান ৬১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বরফের প্রলেপে ঢাকা পড়েছে। তুষারঝড়ের কারণে ২০টি রাজ্যের প্রায় সাড়ে ৮ কোটি মানুষ কার্যত ঘরে বন্দি হয়ে পড়েছেন। রোববার পর্যন্ত এ পরিস্থিতি থাকতে পারে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া দফতর।
দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে ওয়াশিংটনের স্কুল ও সরকারি অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গণপরিবহন চলাচলের সময়সূচি বিকাল থেকে সকাল পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। ওয়াশিংটনের মেয়র মুরিয়েল বাওসার এক বার্তায় স্থানীয় জনগণকে তাদের বাড়িতে অবস্থান করার অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, আমি সবাইকে একটা বিষয় পরিষ্কার জানিয়ে দিতে চাই যে, সামনে বড় ধরনের তুষারঝড় হতে পারে। এটা অনেকটা জীবন-মরণ সমস্যা। আর এ দুর্যোগ প্রত্যাশিত সময়ের আগেই আঘাত হেনেছে।
নিউইয়র্কের সব বাসিন্দাকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ওয়েদার চ্যানেল জানিয়েছে, কমপক্ষে ২০টি রাজ্যের সাড়ে ৮ কোটি মানুষ এখন তুষারঝড়ের কবলে রয়েছে।
তুষারঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘি্নত হচ্ছে। ২ লাখ মানুষ বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে বলে রাজ্যগুলোর প্রশাসন জানিয়েছে। বিপদকালীন পরিস্থিতি সামাল দিতে দোকান থেকে খাদ্যপণ্যসহ প্রয়োজনীয় অন্য সামগ্রী কিনে বাসায় রেখে দিচ্ছেন বাসিন্দারা।
ওয়াশিংটনের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যান্ড ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির পরিচালক ক্রিস গেলডার্ট বলেন, দ্রুত পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। জাতীয় ঐতিহাসিক স্থাপনা, ক্যাপিটাল ভবন ও জাদুঘর বন্ধ থাকবে বলে পুলিশ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে। মেরিল্যান্ডের গভর্নর ল্যারি হগ্যান বলেন, ৯০ বছরের মধ্যে এমন মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ এলাকার মানুষ দেখেনি। ১৯২২ সালের পর এটি হচ্ছে সবচেয়ে ভয়াবহ তুষারঝড়। ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের পরিচালক লুইস উসেলিনি এ ঝড়কে খুবই বিপজ্জনক বলে জানান। দুযোর্গকালীন পরিস্থিতি মোকবিলায় ওয়াশিংটন ডিসিতে ৩০০ এবং নিউইয়র্ক সিটিতে ন্যাশনাল গার্ডের ৬০০ সদস্যকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পুলিশ এবং দমকল বাহিনীতে ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বিবিসি, রয়টার্স, টেলিগ্রাফ, ইয়াহু নিউজ