সাগরে নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত জাটকা (ছোট আকারের ইলিশ মাছ) ধরা নিষিদ্ধ। কিন্তু তা মানছেন না কক্সবাজারের জেলেরা। পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে অবাধে ধরা হচ্ছে জাটকা।
১ এপ্রিল সকালে শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছড়ার পাইকারি মাছের বাজার ফিশারিঘাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, বিপুল পরিমাণ জাটকা বিক্রি হচ্ছে। জাটকা কিনতে ভিড় করছেন ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে উপকূল থেকে আসা একাধিক ট্রলার থেকে খালাস করা হচ্ছে জাটকা। এসব মাছের ওজন ৪০০ গ্রামের নিচে।
সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা কেনা ও সংরক্ষণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, ‘সামনে পয়লা বৈশাখ। এই বৈশাখে কয়েক হাজার মণ ইলিশের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বাজারে ইলিশের আকাল চলছে। তাই জাটকা কিনে সংরক্ষণ করছি। এই জাটকা দিয়েই বড় বড় হোটেলে পান্তা-ইলিশের আয়োজন হবে।’
নুনিয়াছড়ার মৎস্য ব্যবসায়ী আনোয়ার কামাল বলেন, আগে ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হতো ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। আর এখন ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ওজনের জাটকা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। অতিরিক্ত মুনাফার জন্য জেলেরা জাটকা ধরছেন।
মৎস্য অবতরণকেন্দ্র ছাড়াও শহরের নাজিরারটেক, চৌফলদণ্ডী, খুরুশকূল ও মহেশখালী দিয়ে বিপুল পরিমাণ জাটকা ইলিশ খালাস হচ্ছে।
নুনিয়াছড়ার জেলে সলিম উল্লাহ জানান, দুই মাস ধরে সাগরে ইলিশ ধরা পড়ছে না। তাই জেলেরা সাগরের কাছাকাছি এলাকায় গিয়ে জাটকা ধরে আনছেন। জাটকার চাহিদাও বেশি, চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। আগামী জুন মাস পর্যন্ত জাটকা নিধনের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ব্যবসায়ীরা জেলেদের দাদন দিয়ে জাটকা আহরণে উৎসাহিত করছেন।
তাছাড়া জাটকা সংরক্ষণ সময়ে জেলেদের সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার কর্মসূচি চালু থাকলেও কক্সবাজারের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এখানকার জেলেরা এই সহায়তা থেকে বঞ্চিত। ফলে অনেকে জীবিকার তাগিদে জাটকা ধরছেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অমিতোষ সেন বলেন, জাটকা নিধন বন্ধে সাগরে কোস্টগার্ড ও মৎস্য বিভাগের নিয়মিত অভিযান চলছে। কিছুদিন আগে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে প্রায় ৩০ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। উপকূল থেকেও জাটকা নিধনের কয়েক লাখ মিটার নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ও বিহিন্দিজাল জব্দ করা হয়েছে। জাটকা নিধন বন্ধে শিগগিরই ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে র্যা ব, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও বিজিবি সমন্বয়ে যৌথ অভিযান চালানো হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, কক্সবাজারে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৩৮ হাজার ৫১৯ জন। জাটকা সংরক্ষণ সময়ে প্রতিজন জেলেকে মাসে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়ার কর্মসূচি রয়েছে। কিন্তু অধিদপ্তরের শর্তের কারণে এখানকার জেলেরা সরকারি এই খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত।
অধিদপ্তরের শর্তে উল্লেখ আছে, যেসব জেলে শুধু জাটকা আহরণের ওপর নির্ভরশীল তাঁরাই সরকারি এই খাদ্য সহায়তা পাবেন। কিন্তু কক্সবাজারের জেলেরা জাটকার সঙ্গে অন্য মাছও ধরছেন।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন ইলিশের বেড়ে ওঠার সময়। তাই সরকারিভাবে এই আট মাস জাটকা বিক্রয়, মজুত ও পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইন অমান্যকারীকে কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা রয়েছে।
কক্সবাজার কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি কাজী মোস্তাক আহমদ জানান, পয়লা বৈশাখে ইলিশের বিপুল চাহিদা আছে। এ জন্য ইলিশ সংগ্রহে মরিয়া হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকেরা। অনেকে ইলিশ কেনার জন্য ব্যবসায়ীদের অগ্রিম টাকা দিয়ে রেখেছেন। ফলে ইলিশের বদলে জাটকা ধরার মহোৎসব চলছে।