রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশনের এক নেতা পরিচালিত উখিয়া সীমান্তের করইবনিয়ায় সদ্যপ্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসার নীতিমালা বহির্ভূত বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ধর্মীয় লেবাসে শিষ্টাচার বহির্ভূত ওই মাদ্রাসার গুটিকয়েক শিক্ষক নামধারী পরিচালনা কমিটির সদস্যদের বেপরোয়া আচরণসহ অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা, খেয়াল-খুশিমত তাদের মসজিদে আজান দেয়া, নামাজ আদায়সহ প্রভৃতি ঘটনা নিয়ে এলাকার ধর্মভীরু গ্রামবাসীর মাঝে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও উত্তেজনা। এ নিয়ে স’ানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের জের ধরে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত একটি তদন্ত দল গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের সময় আলোচিত ওই মাদ্রাসাটি পরিদর্শন করেন। এ সময় তদন্ত কমিটির নেতৃবৃন্দ উপসি’ত শান্তিপ্রিয় শত শত মুসল্লিদের আশ্বস্ত করে বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। নতুবা অন্য ৪৫০ টি মসজিদের মত এটিকে পরিচালিত করতে হবে।
সরজমিন ঘটনাস’ল করইবনিয়া ঘুরে গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, করইবনিয়া গ্রামের উমর আলীর ছেলে বেলাল উদ্দিন স’ানীয় আলহাজ আজিজুর রহমানের জমি জবর দখল করে রাতারাতি মাদ্রাসাসহ মসজিদের কার্যক্রম শুরু করে। এর আগে কথিত বেলাল উদ্দিনকে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে উখিয়া থানা পুলিশ গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। জামিনে মুক্ত হয়ে বেলাল উদ্দিন তার পিতাকে নিয়ে মালয়েশিয়া পালিয়ে যায়। তার অর্থায়নে পরিচালিত এ মাদ্রাসার হাল ধরেন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগাইনাইজেশনের নেতা দেলোয়ার হোসেন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া এ রোহিঙ্গা নাগরিক নিজেকে কক্সবাজার শহরের বাসিন্দা পরিচয়ে করইবনিয়ার বহুল আলোচিত দারুল হিকমা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বলে দাবি করছেন। গতকাল শুক্রবার প্রশাসনের নিয়োগকৃত তদন্ত টিমের নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী, রত্নাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল কবির চৌধুরী, দেশবিদেশ পত্রিকার সম্পাদক আয়ুবুল ইসলামসহ স’ানীয় একদল সাংবাদিক ও মুসল্লিরা যখন নামাজের আগে ইমামের বয়ান শুনছিল তখনও মসজিদে জায়গা না পেয়ে অসংখ্য মুসল্লি ঘটনা প্রত্যক্ষ করার জন্য বাইরে অপেক্ষা করছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় মসজিদের ইমাম ফেনীর সংসদ নিজাম হাজারীর আত্নীয় পরিচয়দানকারী ইমাম জহিরুল ইসলাম দীর্ঘ বয়ান শেষে মুসল্লিদের সুন্নত পড়ার সুযোগ না দিয়ে সরাসরি খুতবা পড়া শুরু করেন, তাও আবার আজান ব্যতিরেকে। কিছু বাংলা, কিছু আরবির সংমিশ্রণে দেয়া খুতবা নিয়ে মুসল্লিদের মাঝে কানাঘুষা শুরু হলেও তদন্ত কমিটির নির্দেশ থাকায় মুসল্লিরা উজর-আপত্তি করেনি। খুতবা-পরবর্তি যথারীতি দুই রকাত জুমার নামাজ শেষে ইমাম মুনাজাত না করে আবারও যখন সুন্নত পড়তে শুরু করেন, তখন মুসল্লিদের মাঝে শুরু হয় হৈ চৈ। বাকবিতাণ্ডায় এ সময় মুসল্লিরা মারমুিখ অবস’ান নিলে তদন্ত টিম পরিসি’ত নিয়ন্ত্রেণে আনেন। পরে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ১৫ হাজার মানুষের মধ্যে ৪ জন বিতর্কিত মানুষের কার্যক্রম যখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, তখন তাদের নিয়মে মসজিদ চলতে পারে না। তাই এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন যাতে প্রয়োজনীয় আইনগত প্রদক্ষেপ নিতে পারে তাই করতে তদন্ত টিম প্রতিবেদন দাখিল করবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে উখিয়া কেন্দ্রিয় জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ আনোয়ারসহ শত শত গ্রামবাসী আরএসও নেতা কথিত দারুল হিকমা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নামধারী রোহিঙ্গা নাগরিক দেলোয়ারকে গ্রেফতারপূর্বক মাদ্রাসার সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানান।