বাংলাদেশে অবস্থানরত মিয়ানমার নাগরিক সনাক্তে গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে উখিয়ায় মাঠ পর্যায়ে শুরু হয়েছে রোহিঙ্গা নিবন্ধন কার্যক্রম। পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক পরিচালিত চলমান অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক শুমারি-২০১৬ প্রকল্পের আওতায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাসরত অবৈধ রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পরিসংখ্যান কর্মী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
শনিবার সকালে শুমারি কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করতে পরিসংখ্যান ব্যুরো সচিব কানিজ ফাতেমা কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
পরিসংখ্যান ব্যুরো অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক শুমারি ২০১৬ শীর্ষক প্রকল্পটি পরিচালনা করছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। প্রকল্পের মূল্য উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ছবি ও সাধারণ তথ্য সম্বলিত একটি তথ্য সম্ভার প্রণয়ন করা। তাদের বর্তমান অবস্থা এবং বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আগে মিয়ানমারের মূল বাসস্থানের ঠিকানা সহ অনুপ্রবেশের অন্তর্নিহিতকরণ চিহ্নিত করা এব রোহিঙ্গাদের আর্থসামাজিক ও জনমিতি সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রণয়ন করা।
জানা গেছে, উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পে প্রায় ৩৩ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা রয়েছে। এছাড়া কুতুপালং ক্যাম্পের পার্শ্বের রোহিঙ্গা বস্তি ও টেকনাফে হ্নীলা মোছনী এলাকায় অবৈধভাবে বসবাস করছে প্রায় দেড় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নাগরিক। এসব রোহিঙ্গাদের সাহায্য সহযোগীতা প্রদানে প্রশাসনের বিধি নিষেধ আরোপিত থাকায় জীবন জীবিকার তাগিদে এসব রোহিঙ্গা জড়িয়ে পড়েছে নানা অনৈতিক কাজের সাথে। পক্ষান্তরে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। সীমান্তরক্ষী বিজিবি সদস্যরা শত চেষ্টা করেও অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করতে পারছে না। বিজিবির হাতে আটককৃত রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও মানবিক সেবা দিয়ে মিয়ানমারে পুশব্যাক করা হলেও ওইসব রোহিঙ্গারা আবারো ভিন্ন পথে অনুপ্রবেশ করে তাদের আত্মীয় স্বজন বা কুতুপালং বস্তিতে আশ্রয় নিচ্ছে। কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অবৈধভাবে বসবাসের কথা বলা হলেও সঠিক তথ্য কারো জানা নেই।
কক্সবাজার পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপ-পরিচালক ওয়াহিদুর রহমান জানান, ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া রোহিঙ্গা শুমারি কার্যক্রম ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এ সময় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত গণনাকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খসড়া নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করবে।
শুমারি কার্যক্রমের সভাপতি উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন জানান, মিয়ানমারের নাগরিক শুমারি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে উখিয়াকে ৪টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এ ৪টি জোনে ৪ জন পরিসংখ্যান সহকারী, ১১ জন সুপারভাইজার ও ৪০ জন গণনাকারী কাজ করছে।
২নং জোন হলদিয়াপালং ইউনিয়নের পরিসংখ্যান সহকারী মিজবাউল ইসলাম মুন্না জানায়, নিবন্ধন করতে রোহিঙ্গারা আগ্রহী হওয়ার কারণে শুমারি কার্যক্রমে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
রাজাপালং জোনে দায়িত্বরত পরিসংখ্যান সহকারী নুরুল কবির জানান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সচিব কানিজ ফাতেমা কুতুপালং বস্তি এলাকা ঘুরে শুমারি কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি কুতুপালং বস্তিতে কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন।