কক্সবাজার নার্সিং ইনস্টিটিউটের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে এবার খোদ নিজের স্ত্রীকে নার্সিং ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন সদর হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক সিন্ডিকেট প্রধান তুষার কান্তি পাল। এক্ষেত্রে নিয়ম ভেঙ্গে এক জেষ্ঠ্য ইনষ্ট্রাক্টরকে ডিঙ্গিয়ে তুষারের স্ত্রীকে ওই পদে বসানোর জোর তদবীর চলছে। ইতিমধ্যেই সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সুপারিশ নিয়ে ওই তদবির মন্ত্রণালয় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবী।
কক্সবাজার নার্সিং ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, চাকরি জীবন শেষ হওয়ায় আগামী ১ ফেব্রুয়ারী অবসরে চলে যাচ্ছেন নার্সিং ইনস্টিটিউটের বর্তমান ইন্সট্রাক্টর ইনচার্জ সুশীলা রাণী সাহা। এর ফলে খালী হচ্ছে ইন্সট্রাক্টর ইনচার্জের পদটি। নতুন ইনচার্জ নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জের দায়িত্ব দেওয়া হবে বর্তমান ইন্সট্রাক্টরদের মধ্য থেকে। নিয়ম অনুযায়ী বর্তমান ইন্সট্রাক্টরদের মধ্যে জেষ্ঠ্য ইন্সট্রাক্টর ওই পদ পাওয়ার কথা। কিন্তু ইনস্টিটিউটের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিজ সিন্ডিকেটের হাতে রাখতে পদটিতে তুষার পালের স্ত্রী ও জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর অসীমা রাণী বৈদ্যকে বসাতে অনৈতিক তদবির চলছে। অসীমা রাণী বৈদ্যের হয়ে মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর থেকে সকল পর্যায়ে মোটা অংকের টাকায় জোর তদবির অব্যাহত রেখেছেন তার স্বামী কক্সবাজার সদর হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক তুষার কান্তি পাল। এছাড়া ওই তদবিরের সব বিষয় দেখভাল করছেন খোদ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি জানান, স্বামী হাসপাতালের ক্ষমতাধর কর্মচারী হওয়ায় অসীমা রাণী বৈদ্য অফিস করেন ইচ্ছেমত। নিজের অফিস থাকলেও সেখানে না বসে ক্লাসের বাকী সময় পার করেন তিনি ইনচার্জের কক্ষে বসে। ইনস্টিটিউটে চলে তার একচ্ছত্র আধিপত্য। ইনস্টিটিউটের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী চলে তার ইশারায়। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তিনি ইনচার্জকেও এড়িয়ে চলেন। তিনি প্রকাশ্যে বলেন, ইনস্টিটিউটের সকল হিসাব-নিকাশ তার স্বামীর হাতে। যার কারণে নার্সিং ইনস্টিটিউটে অসীমা রাণী বৈদ্য এক আতংকের নাম। তার মানসিক অত্যাচার সকলেই মুখ বুঝে সহ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, বর্তমান ইনচার্জ অবসরে যাওয়ার দিন ঘনিয়ে আসায় ইন্সট্রাক্টররা যে যার মত উপর মহলে আবেদন করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য। সে অনুযায়ী সিনিয়র হিসেবে ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জের দায়িত্ব পাওয়ার জন্য করুণা রাণী বেপারী সেবা পরিদপ্তরে পাঠানোর জন্য একটি আবেদন ফরওয়ার্ড করতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রতন চৌধুরীকে একাধিকবার অনুরোধ করলেও তিনি সরাসরি নাকচ করেন। তাকে নাকচ করা হলেও এর পর পরই অসীমা রাণী বৈদ্যের আবেদনটি সেবা পরিদপ্তরে ফরওয়ার্ড করেন তত্ত্বাবধায়ক। ওই আবেদনটি নিয়েই মূলত: উর্ধ্বতন মহলে তদবির চালাচ্ছেন তুষার কান্তি পাল।
এছাড়া ইন্সট্রাক্টর করুণা রাণী বেপারীকে কোণঠাসা করতে নানা ধরণের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। কিছুদিন আগে শারীরিক অসুস্থতার কারণে দুই দিন অনুপস্থিত ছিলেন ইন্সট্রাক্টর করুণা রাণী বেপারী। ওই অনুপস্থিতির অনুকূলে করুণা বেপারী ছুটির আবেদন ও ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র জমা দিলেও তত্ত্বাবধায়ক ছুটির আবেদন নাকচ করে পাল্টা একটি চিঠি দেন। একই সাথে তাকে হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত লিখে দেয়া হয়। অনুপস্থিতির ওই দুই দিনের বেতন কর্তন করা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে করুণা রাণী বেপারী জানান, বর্তমানে অবসরে চলে যাওয়ার সময় হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জের দায়িত্ব পাওয়ার জন্য সেবা পরিদপ্তরে একটি আবেদন ফরওয়ার্ড করতে চাইলেও তত্ত্বাবধায়ক স্যার করেননি। তাই পরবর্তীতে কে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পাচ্ছে সে বিষয়ে তার কিছুই জানা নেই। যদিও সদর হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি স্থানীয় সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল তার ওই আবেদনে সুপারিশ করে লিখেছেন, যোগ্যতা অনুসারে ইন্সট্রাক্টরদের মধ্য থেকে ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইনস্টিটিউটের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর অসীমা রাণী বৈদ্য বলেন, ‘ইনস্টিটিউটে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেটা জেনে আপনার কি লাভ? বেশি বাড়াবাড়ি করা ঠিক না। আমাদের মানসম্মান আছে।’ ২৬ জানুয়ারী প্রকাশিত সংবাদের কারণে তাদের মানহানি হয়েছে দাবী করে এ প্রতিবেদককে দেখে নেয়ার হুমকি দেন তিনি।
কক্সবাজার নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জ সুশীলা রাণী সাহা বলেন, ‘আগামী ১ ফেব্রুয়ারী আমি অবসরে চলে যাচ্ছি। এরপর কাকে দায়িত্ব দিচ্ছে সেটা সেবা পরিদপ্তরের বিষয়।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রতন চৌধুরী বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জের দায়িত্ব প্রদানের বিষয়টি সম্পূর্ণ মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। সুতরাং এখানে আমার কিছুই করার নেই।’