কক্সবাজার রিপোর্ট : টেকনাফে সমুদ্র সৈকতের তিনটি ঝাউ বাগান থেকে নির্বিচারে হাজার হাজার বৃক্ষ নিধনের ঘটনায় দায়সারা অবস্থান নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ‘শুধুমাত্র ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং প্রতিবেদন দিতে বলেছি’ এইটুকুতে সীমাবদ্ধ রয়েছেন বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, বনকর্মিদের যোগসাজশে গত এক মাস ধরে নির্বিচারে গাছকাটা চললেও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টির ব্যাপারে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেননি। এতদিনে ঘটনাস্থলেও যাননি কোনো কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টরা। বুধবার এ ব্যাপারে দৈনিক কক্সবাজারে সচিত্র সংবাদ প্রচারিত হলে নড়েচড়ে বসেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এখনো পর্যন্ত দায়ীদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কক্সবাজার উপকূলীয় বন বিভাগের সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) জি এম মোহাম্মদ কবির বলেন, ব্যাপকহারে ঝাউগাছ কাটার খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার টেকনাফের শামলাপুর, শিলখালী ও জাহাজপুরার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। “ঝাউগাছ কাটার সাথে জড়িত অনেকের নাম পেয়েছি। জড়িতদের আটক করতে পুলিশ ও বিজিবির সহযোগিতায় কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়েছি। এতে ৬টি কেটে নেয়া গাছ উদ্ধার করা গেলেও জড়িতরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।” বনবিভাগের জনবল সংকট থাকায় বিশাল উপকূলজুড়ে থাকা বাগানের ঝাউগাছ রক্ষা করা যাচ্ছে না বলে জানিয়ে তিনি বলেন, মাত্র ৩ জন বনপ্রহরীকে দিন-রাত বিশাল এই বাগান দেখভাল করতে হয়। ঝাউগাছ নিধনের সাথে বনকর্মিরা জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। “দুষ্কৃতিকারিরা অভিনব কৌশল অবলম্বন করায় বনকর্মিরা তাদের আটক করতে পারেন না। বনকর্মিদের এগিয়ে আসতে দেখলে দৃষ্কৃতিককারিরা দা বা কুড়াল বালুতে লুকিয়ে রেখে জেলে সেজে যান। ফলে দৃষ্কৃতিকারিদের চিহ্নিত করতে অসুবিধায় পড়তে হয়।” স্থানীয়দের কাছে বনপ্রহরীরা ‘মুন্সি’ নামে পরিচিত হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “দৃষ্কৃতিকারিদের অনেকে বনপ্রহরীর মিথ্যা পরিচয় অনৈতিক কাজ করছে। যার দুর্নামের ভাগিদার হচ্ছেন বনকর্মিরা।” ঝাউগাছ নিধনের সাথে জড়িতদের ব্যাপারে এখনো তথ্য সংগ্রহ করার কাজ চলছে উল্লেখ করে জি এম মোহাম্মদ কবির জানান, তদন্ত কাজ শেষ হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। এছাড়া গত বুধবার বিকালে টেকনাফের সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) সরওয়ার আলমের নেতৃত্বে বন বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর, জাহাজপুরা ও শিলখালী এলাকায় সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন ঝাউ বাগানের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বলে জানান কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ কর্মকর্তা মো. আলী কবির। তিনি বলেন, দূর্বৃত্ত কর্তৃক ঝাউ গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে সাথে সাথে টেকনাফের সহকারি বন সংরক্ষককে (এসিএফ) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বলেছি। ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি। প্রতিবেদন হাতে পেলে দায়ী ব্যক্তিদের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান বন বিভাগ কর্মকর্তা আলী কবির। টেকনাফের ইউএনও মো. শফিউল আলম জানান, সৈকতের ঝাউ বাগানের বিশাল এলাকাজুড়ে বৃক্ষ নিধনের খবর পেয়ে বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি। গত বুধবার বিজিবি ও পুলিশ ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়েছে। মাসখানেক আগে একই এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক ঝাউগাছ কেটে নিয়ে যায় দৃষ্কৃতিকারিরা। এসময় বনকর্মিরা অভিযান চালিয়ে ১৪০টি ঝাউগাছ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় টেকনাফ থানায় বন-আইনে ৬ জনের নামে মামলা দায়ের হয়। পরে তারা জামিনে বের হয়ে আসেন। এব্যাপারে উপকূলীয় সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) জি এম মোহাম্মদ কবির বলেন, “গাছ ও বাগান বন বিভাগের হলেও ভূমির মালিক জেলা প্রশাসন। ফলে জটিলতার কারণে দৃষ্কৃতিকারিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও আইনের ফাঁক-ফোকরের কারণে তারা জামিনে বের হয়ে আসে।” টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর, জাহাজপুরা ও শিলখালীর পশ্চিমের সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন এলাকায় তিনটি ঝাউ বাগান থেকে গত এক মাস ধরে কয়েক হাজার কেটে নিয়ে গেছে দূর্বৃত্তরা। সৈকতের অন্তত আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কেটে নেয়া গাছের গোড়াগুলো নিধনের ভয়াবহতার স্বাক্ষ্য বহন করছে। স্থানীয়দের দাবি, ঝাউ বাগান থেকে গত এক মাসে অন্তত পঞ্চাশ হাজারের বেশী গাছ কেটে নিয়েছে দূর্বৃত্তরা। উপকূলীয় জনগণের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় ২০০৬-০৭ সালে টেকনাফের বাহাছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর থেকে জাহাজপুরা পর্যন্ত ১০০ হেক্টর সৈকতের বালিয়াড়ীতে তিনটি বাগানে প্রায় ৫ লাখ ঝাউগাছ লাগায় উপকূলীয় বন বিভাগ। দৃষ্টিনন্দন এসব ঝাউ বাগান পর্যটকদের কাছে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূল রক্ষায়ও কাজ করে।