রামুতে মুক্তিপণের জন্য অপহৃত দুই ভাইকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার পর পুলিশ যখন লাশ উদ্ধার করে, তখনো তাদের মুখ ও কান থেকে রক্ত ঝরছিল। লাশ দুটি রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল গ্রামের ল্যাঙ জালালের ফলের বাগানে পাওয়া যায়।
আজ বুধবার সকালে লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় করা মামলায় আট আসামিসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের পর ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী গ্রেপ্তার হওয়া চার ব্যক্তির বাড়িতে আগুন দেয়।
১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বাড়ির আঙিনায় খেলার সময় দুই ভাই মোহাম্মদ শাকিল (১০) ও মোহাম্মদ কাজলকে (৯) অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। এরপর দুর্বৃত্তরা মোবাইলে চার লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে আসছিল।
তারা বড়বিল গ্রামের মো. ফোরকানের ছেলে। ফোরকান বাইশারী বাজারের একটি দোকানে বিকাশ এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন।
শাকিল বাইশারী শাহনূর উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসা এবং কাজল নারিজবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল।
দুই শিশুকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বাবা মো. ফোরকান। আহাজারি করতে করতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দুই সন্তানকে অপহরণের পর থেকে দুর্বৃত্তরা মোবাইলে চার লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে আসছিল। কিন্তু এত টাকা তাঁর ছিল না। তাই তিনি ছেলেদের মুক্ত করে আনতে পারলেন না। তিনি বলেন, পুলিশের অভিযানের মুখে দুর্বৃত্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে দুই শিশুকে হত্যা করেছে। এর বিচার আল্লাহ করবেন।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে স্থানীয় লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ বড়বিল জঙ্গলে উদ্ধার অভিযান শুরু করলে দুর্বৃত্তরা বিপাকে পড়ে। রাত ১২টার দিকে পুলিশ বড়বিল গ্রামের ল্যাঙ জালালের ফলের বাগান থেকে দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করে। শিশুদের মুখ ও কান থেকে তখনো তাজা রক্ত ঝরছিল।
রামু থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মো. কায়কিসলু জানান, দুই শিশুকে অপহরণের পর থেকে পুলিশ বড়বিল, থিমছড়ি, বাইশারী, ঈদগড় জঙ্গলে অভিযান চালায়। মুক্তিপণের জন্য ডাকাতেরা পরিকল্পিতভাবে দুই শিশুকে অপহরণ করেছিল। কিন্তু মুক্তিপণ না পেয়ে তারা দুই শিশুকে গলাটিপে হত্যা করে।
এ ঘটনায় পুলিশ তিন নারীসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন, উপজেলার গর্জনিয়া ও বড়বিল গ্রামের ইমাম আলী, জাহাঙ্গীর আলম, আবদুল শুক্কুর, মো. ইউনুস, রাশেদা বেগম, লায়লা বেগম, আলমগীর হোসেন, ফাতেমা খাতুন ও রোমান উদ্দিন প্রকাশ নোমান।
রামু থানার পরিদর্শক মো. কায়কিসলু জানান, দুই শিশুকে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আজ সকালে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী গ্রেপ্তার হওয়া ইমাম আলী, আবদুল শুক্কুর, মো. ইউনুস ও আলমগীর হোসেনের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আবদুল শুক্কুর একটি হত্যা মামলার সাত বছরের পলাতক আসামি। গ্রেপ্তার হওয়া অন্য আটজনের বিরুদ্ধে রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় হত্যা, ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফোরকান বাদী হয়ে রামু থানায় আটজনসহ অজ্ঞাতনামা আরও অনেকের বিরুদ্ধে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে মামলা করেন।
কক্সবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) আবদুল মালেক মিয়া জানান, দুই শিশু হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার নয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। কক্সবাজার বিচারিক হাকিম আদালতে এ আবেদনের ওপর শুনানি হবে।